নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
প্রায় চার দশক আগের মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর হত্যা মামলায় প্রধান আসামি সাবেক সেনাশাসক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ’কে অব্যাহতি দিয়ে সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে জমা পড়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিন ১২ জানুয়ারি ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দিলারা আলো চন্দনার আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
তিন দিন আগে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা পড়লেও তথ্যটি শুক্রবার ওই আদালতের পেশকার নূর মোহাম্মদ খান জানিয়েছেন।
এরশাদ ছাড়াও মৃত্যু হওয়ায় মামলার আরেক আসামি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আবদুল লতিফকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
মোট পাঁচ আসামির মধ্যে এই দুজন বাকি তিন জনকেই সম্পূরক অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে। নতুন কোনো আসামিকে যুক্ত করা হয়নি।
আগের বাকি তিন আসামি হলেন- অবসরপ্রাপ্ত মেজর কাজী এমদাদুল হক, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তফা কামাল উদ্দিন ভূইঞা ও অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল শামসুর রহমান শমসের। এরা সবাই জামিনে রয়েছেন।
পেশকার নূর মোহাম্মদ timebanglanews.com কে বলেন,সাবেক রাষ্ট্রপতি হু.মু. এরশাদ ও লতিফের মৃত্যুর কথা তুলে ধরে সম্পূরক অভিযোগ পত্রে ‘মৃত্যুজনিত কারণে দায় থেকে তাদের অব্যাহতির’ প্রার্থনা জানানো হয়।
অভিযোগ পত্র’টির ওপর শুনানির জন্য বিচারক ২৫ জানুয়ারি দিন রেখেছেন বলে তিনি জানান।
১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় চট্টগ্রামে একদল সৈন্যের গুলিতে নিহত হন জিয়াউর রহমান। ওই ঘটনার পর পুলিশের হাতে আটক হন জেনারেল মঞ্জুর। পুলিশ হেফাজত থেকে ১ জুন চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নেয়ার পর তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এর ১৪ বছর পর ১৯৯৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন মঞ্জুরের ভাই। ওই বছরই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তখনকার সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ অভিযোগ পত্র দেন এবং বিচার শুরু করে আদালত।
তবে সরকার বদল এবং দফায় দফায় রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আবেদনে মামলার বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে আসতে লেগে যায় আরো ১৮ বছর।
মামলার শুনানির সময় আত্মপক্ষ সমর্থনে সাবেক রাষ্ট্রপতি হু.মু.এরশাদ বলেন, জেনারেল মঞ্জুরকে জীবিত অথবা মৃত ধরিয়ে দেয়ার জন্য তৎকালীন সরকার রেডিও টিভিতে ৫ লাখ টাকা ঘোষণা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। তবে ওই ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
“ধরা পড়ার পর মেজর মঞ্জুরকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে আনার পথে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা তাকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে এবং পরে নিরাপত্তা প্রহরীর সঙ্গে গুলি বিনিময় হয়। একপর্যায়ে আবুল মঞ্জুর গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান।”
তখনকার স্বরাষ্ট্র সচিব মাহবুবুজ্জামান এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া জবান বন্দিতে বলেন, তখনকার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের নির্দেশে পুলিশ আবুল মঞ্জুরকে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে।
২০১২ সালের ২ অক্টোবর নাজিমউদ্দিন রোডের বিশেষ এজলাসে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজের কাছে আত্মপক্ষ সমর্থন করে লিখিত বক্তব্য দাখিল করেন এরশাদ। মামলার অপর আসামি অবসরপ্রাপ্ত মেজর কাজী এমদাদুল হকও আদালতে লিখিত বক্তব্য দেন।
তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাহার আকন্দসহ রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২৮ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয় এ মামলায়। সাবেক সেনাপ্রধান আবু সালেহ মো. নাসিম এবং তৎকালীন মহানগর হাকিম আবুল হাসেমও ছিলেন সাক্ষীদের মধ্যে।
২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) আসাদুজ্জামান খান রচি রায়ের ১৩ দিন আগে মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করেন।
আবেদনের শুনানিতে তিনি বলেন, “এ মামলায় সঠিকভাবে তদন্ত হয়নি। ফলে আরও অনেককে সাক্ষী করা যায়নি। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য মামলাটি অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন।