করোনাভাইরাসে চীনে ব্যাপক প্রাণহানির পর দক্ষিণ কোরিয়ায়ও তা মারাত্মক রূপ নিতে যাচ্ছে। সেখানে ঘণ্টায় গড়ে ২৫ জন করে আক্রান্ত হচ্ছেন এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে। এতে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ছয় হাজার ৮৮ জন। গত সপ্তাহে যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৭৬৬ জন। এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের। সবমিলিয়ে ব্যাপক শঙ্কা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন কোরীয়রা।
কোভিড-১৯ আতঙ্কে বাসা থেকে বের হচ্ছেন না অনেক বাংলাদেশি প্রবাসী। ঘরের মধ্যেই তাদের স্বেচ্ছায় বন্দি জীবন কাটাতে হচ্ছে।
হানিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক আরিফুর রহমান বলেন, খুবই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে সময় কাটাতে হচ্ছে, কোথাও বের হতে পারছি না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ মার্চ ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভাইরাস আক্রান্তের কারণে তা ১৪ দিন পিছিয়েছে।
তিনি বলেন, এমন অবস্থায় অনলাইনেই ক্লাস নেয়া হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়।
কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তদের বেশিরভাগই দক্ষিণাঞ্চলীয় দেগু শহরের বাসিন্দা। শহরটি থেকে বাংলাদেশি প্রবাসী মাহবুবুর রহমান বলেন, আজ তিন সপ্তাহ বাসা থেকে বের হই না। শুধু যেখানে কাজ করি সেই কারখানা পর্যন্তই আমাদের যাতায়াত সীমিত। প্রতিদিন কোম্পানিতে ঢোকার সময় তাদের শরীরের তাপমাত্রা চেক করা হয়।
তিনি আরও জানান, কারখানার কাছেই বাসা। কাজেই দূরে কোথাও না-যাওয়ার ক্ষেত্রে মালিকের পক্ষ থেকে বারণ রয়েছে।
‘আমাদের এই কারাখানাতে কোরীয়সহ ১০০ শ্রমিক কাজ করেন। তার মধ্যে বাঙালি ১৭ জন। তবে খাওয়া-দাওয়া একটু কষ্ট হচ্ছে। হালাল খাবারের দোকানে ফোন করলে তারা খাবার নিয়ে আসে। কিছু প্রয়োজন হলে কুপাংয়ে অর্ডার করি,’ বললেন এই প্রবাসী।
এরই মধ্যে কোরিয়াতে যে গির্জাটি থেকে প্রথম করোনা ছড়াতে শুরু করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সরাসরি খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ, বহু নিষেধ সত্ত্বেও যে তৎপরতার সঙ্গে করোনা মোকাবেলার কথা ছিল গির্জাটির, তারা তা করেনি।
ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন সেই গির্জাপ্রধান লি মান-হি। শিনচিওনজি নামের এই গির্জার প্রধান গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে দুইবার হাঁটু গেড়ে নত মস্তকে ওই ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
লির বিরুদ্ধে সম্ভাব্য অবহেলার অভিযোগ এনে বিষয়টি তদন্ত করতে চাইছেন দেশটির আইনপ্রণেতারা।
বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায় সফর করেছেন, এমন লোকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে। এছাড়াও আরও ৩৬টি দেশ একই পদক্ষেপ নিয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী চুঙ সেই-কিউন বলেন, শুক্রবার পর্যন্ত ফেইস মাস্ক রফতানি বন্ধ থাকবে। কোরীয়দের মধ্যে মাস্ক ব্যবহার বাড়ছে। মাস্ক সংগ্রহে অধিকাংশ লোককে কয়েক ঘণ্টা করে লাইনের দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।