সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ইদলিব নিয়ে ভয়ঙ্কর খেলায় মেতেছে রাশিয়া ও তুরস্ক। অঞ্চলটিতে আসাদ বাহিনীর সঙ্গে এক প্রকার সরাসরিই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে এরদোগানের তুরস্ক।
বাসার আল-আসাদের পক্ষে কোনো মুহূর্তে রাশিয়া এই যুদ্ধে তুরস্কের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারে, এমন আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে।
রক্তক্ষয়ী ওই প্রদেশটির উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান মস্কো যাচ্ছেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে সিরিয়ার ইদলিবে আসাদ বাহিনীর বিমান হামলায় তুরস্কের ৩৪ সেনা নিহত হন। এর পরই গত রোববার আঙ্কারা ইদলিবে অপারেশন স্প্রিং শিল্ড পরিচালনা শুরু করে।
ইদলিবে গত কয়েক দিনের হামলা-পাল্টাহামলায় সিরিয়া এবং তুরস্ক দুপক্ষেরই প্রাণহানি হয়েছে।
বুধবার সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর ১৫১টি ট্যাংক ধ্বংসের দাবি করেছে তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রলাণালয়। এ ছাড়া একই দিনে তুরস্ক তাদের দুজন সৈন্যের নিহত হওয়ার খবর স্বীকার করেছে। সে হিসাবে এ নিয়ে ইদলিবে নিহত তুর্কি সৈন্যের সংখ্যা সরকারিভাবেই ৫০ ছাড়িয়ে গেছে।
অন্যদিকে তুরস্ক সিরিয়ার তিনটি যুদ্ধবিমান গুলি করে নামিয়েছে এবং দাবি করেছে তাদের হামলায় ৬০০ এর বেশি সিরিয় সৈন্য এবং শিয়া মিলিশিয়া মারা গেছে।
এখনও তুরস্ক সিরিয়ায় সরাসরি রুশ সৈন্য বা রুশ যুদ্ধ বিমান টার্গেট করেনি, কিন্তু পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে তেমন ঘটনা মাত্র সময়ের ব্যাপার বলে সামরিক বিশ্লেষকদের অনেকেই আশঙ্কা করছেন।
বুধবার আঙ্কারায় ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি)-এর এক সভার পর এরদোগান বলেছেন, ইদলিবে দ্রুত একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য তিনি মস্কোতে গিয়ে চেষ্টা করবেন।
তবে ইদলিবে তুরস্কের সামরিক তৎপরতায় অসন্তুষ্টির কথা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে মস্কো।
এরদোগানের মস্কো সফরের আগের দিন রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইদলিবে তুরস্কের সৈন্যদের সঙ্গে জিহাদি বিদ্রোহীদের সখ্যতা এবং সহযোগিতা আরো দৃঢ় হচ্ছে।
রাশিয়া বলছে, সিরিয়ার ভেতরে তাদের যান্ত্রিক বহরের বিপুল সমাবেশ ঘটিয়ে তুরস্ক আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে।
তবে রাশিয়ার এমন অবস্থানে তুরস্ক তার অবস্থান থেকে ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানা গেছে।
বিশেষত ইদলিবের সারাকেব শহরে সিরিয়ার এক হামলায় ৩৪ জন তুর্কি সৈন্যের মৃত্যুর ঘটনায় তুরস্ক বেশ উত্তেজিত। একটি হামলায় এত প্রাণহানি তুর্কি সেনাবাহিনীতে গত ৩০ বছরে হয়নি।
সে কারণে প্রতিদিনই তুরস্কের সরকার সমর্থিত বিভিন্ন মিডিয়ায় সিরিয়ায় বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরুর আহ্বান জানানো হচ্ছে। তাছাড়া এ সংকটে যুক্তরাষ্ট্রও তুরস্কের পাশে দাঁড়িয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার এরদোগান এবং পুতিনের বৈঠকে ইদলিব নিয়ে সৃষ্ট সংকটের সমাধান কতটুকু হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
সূত্র: বিবিসি বাংলা