রাজধানীর ৪০ হাজার হত দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষের কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। তালিকা তৈরি করে সকলের হাতে হাতে খাবার পৌঁছে দেয়ার এই কার্যক্রমে সন্তুষ্ট ত্রাণ গ্রহণ করা মানুষগুলো।
হাতে হাতে ত্রাণ নেয়া ৬০ বছর বয়সী নারী রেজিয়া। তিনি বলেন, ‘ত্রাণ নিতে গিয়া ঠেলা ঠেলি কইরা আমরা কী আর শক্তিতে পারি। তাই ত্রাণ আনতে গিয়াও পাই নাই। কিন্তু বাসায় আইসা আমার হাতে চাউল দিয়া গেছে, খুব খুশি হইছি।’ কে ত্রাণ দিয়েছে তা অবশ্য জানেন না তিনি। তাই মেয়র আতিক ত্রাণ দিয়েছেন শোনার পর তিনি বলেন, খুব ভালা কাম করছে। আমাগো খাওন আনতে আর বাইরে যাওয়া লাগব না।
ময়মনসিংহ থেকে এসে ঢাকায় বসবাস করা আরেক নারী হেনা। সে মানুষের বাসায় কাজ করে টাকা আয় করত। কিন্তু করোনার ভয়ে এখন আর তাকে কাজে রাখছে না কেউ। অভাবের এই সময়ে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেয়ায় তিনিও খুব খুশি। জানান, এমন উদ্যোগ থাকলে লক ডাউনের এই সময়ে অকারণে বাসা থেকে বের হতে চান না তিনি।
চায়ের দোকানের আয়ে সংসার চলে শাহজাদার। কিন্তু ২৫ তারিখ থেকে তার দোকান বন্ধ। স্বল্প সঞ্চয় যা ছিলো তাও শেষ। এমন সময় কিছু তরুণ এসে তার কাছ থেকে নাম আর মোবাইল নম্বর নিয়ে যায়, বলে ত্রাণ পাঠাবে। বিষয়টি খুব একটা বিশ্বাস করতে পারেননি তিনি। কিন্তু হঠাৎ করেই যখন তার বাড়িতে মোটরসাইকেলে করে একজন এসে ত্রাণ দিয়ে যান, তখন বেশ অবাক হন তিনি। শাহজাদা বলেন, কে ত্রাণ দিতেছে, ছবি তোলা কোন কিছু না। শুধু খাওনের বস্তা দিয়া গেছে তারা। এখন ত সবে ত্রাণ দেয়ার আগে ছবি তুলে লাইনের। আর আমার বাসায় আইসা ত্রাণ দিয়া গেছে। এমন হইলে কে এই অসময় বাসা থেইকা বাইর হবে।
ঢাকায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজার মানুষের কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলে জানায় মেয়র আতিকের অফিস। জানা যায়, ভিড় না করে এই মানুষগুলোর কাছে খাবার পৌঁছে দিতে প্রাথমিকভাবে আগে তাদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে তালিকা তৈরি করা হয়। এ সময় তাদের পেশা, পরিবারের সদস্য সংখ্যাসহ তাদের কি পরিমাণে সহায়তা প্রয়োজন তার একটা হিসেব করা হয়। তারপর এই কার্যক্রমে সহায়তা করে আসা বিডি ক্লিনের সদস্যরা নির্দিষ্ট বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করে। এ বিষয়ে যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ শনিবার থেকে পরিপূর্ণভাবে কার্যক্রম শুরু করা হয়। রবিবার থেকে প্রতিদিন ১ হাজার মানুষের কাছে এই সহায়তা পৌঁছে দেয়া হবে।
সেখানে আরো বলা হয়, আমরা এই ৪০ হাজার মানুষের তালিকা সরকারকে আলাদা করে প্রদান করব, যেনো একই মানুষের কাছে ত্রাণ না গিয়ে সকলের কাছে সমানভাবে পৌঁছায়।
৪০ হাজারেরও বেশি হত দরিদ্রের কাছে খাবার পৌঁছে দেয়ার এই প্রস্তুতিতে প্রতিটি পরিবারের জন্য তৈরি প্যাকেটে থাকছে ৫ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ লিটার তেল, ১ কেজি আলু এবং ১টি সাবান। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বিবেচনায় এনে এর পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে।
ত্রাণ কার্যক্রম প্রসঙ্গে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে যে অবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি, তা যে আরো বেশ কিছুদিন চলবে সেটা আমরা জানি। এই পরিস্থিতিতে মানুষের কী প্রয়োজন তাও জানি আমি। এখন সময় সবাইকে হাতে হাত মিলিয়ে চলার। সবাই যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসলে, এই পরিস্থিতি মোকাবেলা সম্ভব। সকলকে সরকার প্রদত্ত নির্দেশাবলী মেনে চলতে হবে। লকডাউন কার্যকর হলে এই দুঃসময় দ্রুত পার করতে পারব আমরা।
খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়ার এই কার্যক্রম পরিচালনা করা ’বিডি ক্লিন’-এর প্রধান সমন্বয়ক ফরিদ উদ্দিন জানান, ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেয়া আমাদের কর্মী এবং ত্রাণ গ্রহণ করা মানুষগুলো উভয়ের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় এনে খাবার পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনাটি সাজানো হয়েছে। কোন ভিড় নয়, বরং নির্দিষ্ট পরিবারের কাছে আমাদের ২ জন কর্মী ত্রাণ পৌঁছে দেবেন। সেই লক্ষ্যে এরই মধ্যে আমাদের এই কর্মী বাহিনী তালিকা তৈরি করে ফেলেছে। আশা করছি সময় মত এই পরিবারগুলোর কাছে খাবার পৌঁছে দিতে পারব আমরা।