আন্তর্জাতিক ব্রান্ড ও খুচরা বিক্রেতাদের এশীয় অঞ্চলের তৈরি পোশাক কারখানার সঙ্গে ক্রয়াদেশের শর্ত ও চুক্তি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে স্টার নেটওয়ার্ক। মূলত করোনাভাইরাসের প্রভাবে শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত ও কর্মহীন হয়ে পড়া রোধ এবং সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। বুধবার স্টার নেটওয়ার্কের সদস্য ৯টি বাণিজ্য সংগঠন এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি জার্মানির দাতা সংস্থা জিআইজেডের উদ্যোগে এশিয়া অঞ্চলের ৬টি দেশের ৯টি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সংগঠনগুলোকে নিয়ে স্টার নেটওয়ার্ক (সাসটেইনেবল টেক্সটাইল অব এশিয়ান রিজিয়ন) নামের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন গঠিত হয়। এ সংগঠনের সদস্য হচ্ছে- বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ), চীন ন্যাশনাল টেক্সটাইল এবং পোশাক কাউন্সিল (সিএনটিএসি), গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন কম্বোডিয়া (জিএমএসি), মিয়ানমার গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (এমজিএমএ), পাকিস্তান হোসিয়ারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (পিএইচএমএ), পাকিস্তান টেক্সটাইল এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (পিটিইএ), টাওয়াল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব পাকিস্তান (টিএমএ), ভিয়েতনাম টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (ভিআইটিএএস)।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর কারণে পুরো বিশ্ব সংকটময় মুহূর্ত পার করছে। এ সংকট মোকাবেলায় দায়িত্বশীল ব্যবসা পরিচালনা আগের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে উঠেছে। বিশেষত বিশ্বব্যাপী টেক্সটাইল এবং পোশাক সরবরাহকারী ব্রান্ড সংস্থা, খুচরা বিক্রেতা এবং ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল ক্রয় অনুশীলন সরবরাহকারী প্রান্তের লাখ লাখ শ্রমিকের মৌলিক অধিকার এবং তাদের পরিবারের জীবিকা নির্বাহের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। শ্রম অধিকার, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং টেকসই সাপ্লাই চেইনের প্রতি বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের প্রতিশ্র“তি রক্ষা এবং সম্মান দেখানোর এটাই উপযুক্ত সময়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের প্রতি ৯টি আহ্বান জানানো হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ক্রয়াদেশ হ্রাসের সময় সাপ্লাই চেইনের শ্রমিক এবং ছোট ব্যবসার ওপর সম্ভাব্য প্রভাব সাবধানতার সঙ্গে বিবেচনায় নেয়া। দ্বিতীয়ত, বিগত ক্রয়াদেশের শর্ত মানা এবং দায়বদ্ধতাগুলো মেনে চলা।
পাশাপাশি পণ্যের দাম পুনঃনির্ধারণ ও অর্থ পরিশোধ পদ্ধতির পরিবর্তন থেকে বিরত থাকা। তৃতীয়ত, নিয়মমাফিক ডেলিভারি ও শিপমেন্ট গ্রহণ এবং যেসব পণ্য বানানো হয়েছে তার অর্ডার বাতিল না করা। চতুর্থত, অর্ডার বাতিল বা স্থগিত করলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে এফওবির শতভাগ মূল্য পরিশোধ অথবা শ্রমিকদের বেতন ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হবে। পঞ্চমত, বিলম্বে ডেলিভারি এবং শিপমেন্টের জন্য সরবরাহকারীকে দায়ী করা থেকে বিরত এবং এজন্য ক্ষতিপূরণ দাবি না করা।
বিজিএমইএর তথ্যমতে, বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত দেশের তৈরি পোশাক খাতের এক হাজার ১১৯টি কারখানায় ৯৬ কোটি ৪০ লাখ পিস পোশাক পণ্যের রফতানি আদেশ বাতিল ও স্থগিত করা হয়েছে; যার আর্থিক মূল্য ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এসব কারখানায় ২২ লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করেন।
৪১ কারখানা খোলা : দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪১টি পোশাক কারখানা খোলা রয়েছে। এর মধ্যে সাভারের আশুলিয়ায় ছয়টি, চট্টগ্রামে ১০টি, গাজীপুরে ২১টি, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৪টি গার্মেন্ট খোলা ছিল। তবে লকডাউন করায় নারায়ণগঞ্জে কোনো পোশাক কারখানা খোলা ছিল না। বিজিএমইএ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজিএমইএর পক্ষ থেকে জানানো হয়, চালু কারখানার সবটিতেই জরুরি রফতানি ক্রয়াদেশ রয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মাস্ক, চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামসহ (পিপিই) করোনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরি করতে খোলা রাখা হয়।