প্রশাসনে জুনিয়রদের অধীনে সিনিয়র কর্মকর্তাদের পদায়নের অভিযোগ জোরালো হচ্ছে। বিশেষ করে শুধু জুনিয়র ব্যাচের সচিবের অধীনে নয়, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে ইনহাউস ডেস্ক বণ্টনের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা হরহামেশা ঘটছে। বিষয়টি এমন পর্যায়ে গেছে যে, কয়েকজন কর্মকর্তা মৌখিকভাবে অভিযোগ জানানো ছাড়াও লিখিতভাবে তাদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। বিসিএস এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের কাছে সম্প্রতি এমন অভিযোগ জমা পড়েছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশাসনে সিনিয়র সচিব/সচিব পদে ১৯৮৪ ব্যাচ থেকে নিচের দিকে ৯ম ব্যাচ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। প্রশাসনের শীর্ষ এ পদে সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে ৯ম ব্যাচ থেকে পদোন্নতিসহ পদায়নের অভিষেক হয়। কিন্তু ১৯৮৪, ৮৫ ও ৮৬ ব্যাচের অতিরিক্ত সচিবদের মধ্যে অনেকে মনে করেন, সিনিয়র ব্যাচে অধিকতর যোগ্য কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও জুনিয়র ব্যাচ থেকে সচিব করা হচ্ছে।
এছাড়া কিছু কিছু মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দফতরে ইনহাউস দায়িত্ব বণ্টনের ক্ষেত্রেও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের গাইডলাইন মানা হচ্ছে না। সিনিয়র ব্যাচের অতিরিক্ত সচিবকে গুরুত্বপূর্ণ সেকশন/দায়িত্ব না দিয়ে জুনিয়র ব্যাচের অতিরিক্ত সচিবকে বেশি মূল্যায়িত করা হচ্ছে। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিব্রত হওয়া ছাড়াও সেখানে কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ থাকছে না। সম্প্রতি এ বিষয়গুলো অবতারণা করে ১৯৮৫ ব্যাচের একজন অতিরিক্ত সচিব বিসিএস এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের কাছে লিখিত অনুযোগপত্র দিয়েছেন।
সেখানে তিনি প্রতিকার চেয়ে উল্লেখ করেন, ‘বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব পদে ৮৪ ব্যাচ থেকে একাদশ ব্যাচ পর্যন্ত কর্মরত আছেন। অতীতে সচিব পদে পদোন্নতির জন্য জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বাছাই করা হতো। বর্তমানে তা অনুসৃত হচ্ছে না। সাম্প্রতিককালে এটি চরম পর্যায়ে গেছে। ৮৪ ব্যাচের কমবেশি ২৫ জন কর্মকর্তা এবং ৮৫ ব্যাচের কমবেশি ৯০ জন কর্মকর্তা এখনও কর্মরত আছেন। তা সত্ত্বেও বেশ কিছুদিন ধরে এই দুটি ব্যাচ থেকে আর পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে না।
বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, এই দুটি ব্যাচ হতে আর সচিব করা হবে না। অথচ এই দুটি ব্যাচ থেকে সচিব পদে পদোন্নতি দেয়ার জন্য কম করে হলেও ৮/১০ জন যোগ্য কর্মকর্তা পাওয়া সম্ভব। এদের বাদ রেখেই ৮ম ও ৯ম ব্যাচের কর্মকর্তাদের সচিব করা হচ্ছে। এতে চেইন অব কমান্ড বিঘ্নিত হচ্ছে। সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ না থাকায় কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। ফলে কাজের গতি মন্থর হয়ে গেছে। এ ছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও মন্ত্রণালয়গুলোতে পদায়নের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতার নিয়ম অনুসরণ করা হচ্ছে না। কনিষ্ঠদের অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হচ্ছে।’
এদিকে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ যুগান্তরকে বলেন, ‘সচিব নিয়োগ সম্পূর্ণ সরকারের নিজস্ব বিষয়। এছাড়া যেহেতু প্রতিটি ব্যাচে কর্মকর্তার সংখ্যা অনেক তাই সবাইকে সচিব করা সম্ভবও হবে না। তবে ইনহাউস দায়িত্ব বণ্টনের ক্ষেত্রে যাতে জ্যেষ্ঠতার বিষয়টি মেনে চলা হয় সেজন্য অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সচিবদের জানিয়ে দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘সচিবদের আমরা বলে দেব- তারা যেন সিনিয়র ব্যাচের অতিরিক্ত সচিবদের যথাযথ সম্মান দিতে কার্পণ্য না করেন। কেননা যোগ্যতা না থাকলে কেউ তো অতিরিক্ত সচিব হতে পারেননি। তাই অন্তত ইনহাউস ডেস্ক প্রদানের ক্ষেত্রে সচিবরা যেন সিনিয়র ব্যাচের অতিরিক্ত সচিবদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেন- সে বিষয়ে শিগগির অফিসিয়ালি অনুরোধ জানাব।’