পরিকল্পনা কমিশনের ভেটোর মুখে বাঁধ সংস্কার ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প থেকে পরামর্শক ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রস্তাব বাদ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটিতে পরামর্শক খাতে ধরা হয়েছিল ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ধরা হয় ৩ কোটি টাকা।
ফলে সরকারের নিজস্ব তহবিলের প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা অযাচিত খরচ সাশ্রয় হয়েছে। সেই সঙ্গে ছোট ছোট আরও ছয় খাতের ব্যয় বাদ দেয়া হয়েছে প্রকল্প থেকে। ‘সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার ১, ২, ৬-৮ (এক্সটেনশন) এর নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন’ প্রকল্পে ঘটেছে এমন ঘটনা। এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে পরিকল্পনা সচিব মো. নূরুল আমিন রোববার যুগান্তরকে বলেন, এখন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা অত্যন্ত কঠোরভাবে প্রকল্প প্রস্তাবগুলো মূল্যায়ন করছেন। ফলে এসব বিষয় বেরিয়ে আসছে। আমরা ইতোমধ্যে এনইসি এবং একনেক বৈঠকে মন্ত্রণালয়গুলোকে বলেছি যাতে তারা প্রকল্প প্রস্তাব তৈরিতে আরও বেশি সতর্ক হন।
সচিব পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোয় সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করার কারণে এমনটি হচ্ছে। আমরা বলে দিয়েছি, মন্ত্রণালয় পর্যায়েই প্রকল্প প্রস্তাবগুলো এমনভাবে মূল্যায়ন করতে হবে, যাতে পরিকল্পনা কমিশন কোনো অযাচিত ব্যয় নিয়ে আপত্তি তুলতে না পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে এ প্রকল্পটির বিষয়ে আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।
সূত্র জানায়, ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা। একনেকে অনুমোদন পেলে চলতি মাস থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, সাতক্ষীরা জেলার অন্তর্গত পোল্ডার ১, ২ এবং ৬-৮ এর নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা।
এছাড়া পোল্ডারের অভ্যন্তরে বিদ্যমান নদী বা খালগুলো পুনঃখনন, বাঁধ পুনরাকৃতিকরণের মাধ্যমে এলাকায় লবণাক্ত পানি প্রবেশ রোধ করা এবং সেচ সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রকল্প প্রস্তাবে পরামর্শক এবং প্রকল্প পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রস্তাব করা হয়। গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এই প্রস্তাবের ব্যাখ্যা চায় পরিকল্পনা কমিশন।
পরবর্তী সময়ে সর্বসম্মতিক্রমে এ দুই খাতের ব্যয় বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে বৈদেশিক ভ্রমণ খাতে প্রস্তাবিত ৫০ লাখ টাকার প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত বাদ দেয়া যায়নি। এক্ষেত্রে বৈদেশিক ভ্রমণের পরিবর্তে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বা স্টাডি ট্যুর কথাটি সংযোজনের সুপারিশ করে পরিকল্পনা কমিশন। সেই সঙ্গে কোন কোন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা প্রতিষ্ঠানের কতজন প্রশিক্ষণ নেবেন, তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি কী বিষয়ে, কত ব্যাচে এবং কোন দেশে প্রশিক্ষণ নেয়া হবে তার বিস্তারিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া অন্য যেসব ব্যয় প্রস্তাব বাদ দেয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- দুটি ডিজিটাল ক্যামেরা বাবদ এক লাখ টাকা, ছয়টি প্রকৌশল যন্ত্রের জন্য সাড়ে সাত লাখ টাকা, দুটি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের জন্য দুই লাখ টাকা এবং সেমিনার ও কনফারেন্স বাবদ ১০ লাখ টাকা। আরও বাদ দেয়া হয়েছে- কম্পিউটার সমাগ্রী বাবদ তিন লাখ টাকা, সাধারণ সরবরাহ খাতে ১০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা মেরামত বাবদ ১০ লাখ টাকা।
একনেকের জন্য তৈরি প্রকল্পের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, প্রকল্প এলাকাটি সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া, দেবহাটা, আশাশুনি ও তালা উপজেলায় অবস্থিত। ১, ২ এবং ৬-৮নং পোল্ডার কপোতাক্ষ নদ, মরিচ্চাপ নদী, ইছামতি নদী, পারুলিয়া সাপমারা খাল ও সাতক্ষীরা খালসহ অসংখ্য নদ-নদী ও খাল পরিবেষ্টিত। প্রকল্প এলাকার পোল্ডারগুলোর অভ্যন্তরীণ খাল ও পার্শ্ববর্তী নদীগুলো উচ্চমাত্রায় পলির কারণে ধারণক্ষমতা কমে গেছে। ফলে জলাবদ্ধতার কারণে কৃষি উৎপাদন কমে গেছে।
পোল্ডারগুলো নদীতে জোয়ার-ভাটা, উচ্চ জোয়ারের চাপ এবং ঝড়ো বাতাসের কারণে সৃষ্ট ঢেউয়ের আঘাতে প্রতিনিয়ত নদীভাঙনের সম্মুখীন। এ সমস্যা সমাধানে ২০১৪ সালে আইডব্লিউএম একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে। সেটিসহ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর (নকশা) নেতৃত্বে গঠিত কারিগরি কমিটির সুপারিশের ওপর ভিত্তি করে প্রকল্পটি প্রস্তব করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হল- ৬০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার নদী পুনঃখনন, ২০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং এবং ৩৪৪ দশমিক ২২ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করা। এছাড়া ১১৩ দশমিক ১২ কিলোমিটার বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ, ১ হাজার ৭০০ মিটার বাঁধের ঢাল প্রতিরক্ষা এবং ২৭টি নিষ্কাশন রেগুলেটর মেরামত ও পুনর্গঠন করা হবে।