দেশের ৬৫ হাজার ৬ শ' ৭২ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে
২০২২ সালের জাতীয় শিক্ষা পদকে শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয় (দ্বিতীয় স্থান) হিসেবে নির্বাচিত হলো কক্সবাজার জেলার সাগরকন্যা কুতুবদিয়ার উত্তর লেমশীখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ তালিকা চূড়ান্ত করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
প্রথমস্থান অধিকার করেছেন রংপুর বিভাগের ঠাকুর গাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার চরভিটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।দুটি স্কুলই নানা সুবিধা বঞ্চিত একেবারে গ্রামীন জনপদের।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রশাসন বিভাগের পরিচালক এস এম আনছারুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্টানে চিটি ইস্যু করেছেন গত ৯ মার্চ। সুবিধাজনক সময়ে বিজয়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোকে পদক ও সার্টিফিকেট তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
অদম্য ইচ্ছা শক্তি, পরিশ্রম দক্ষতাও সততা যে সাফল্যের চাবিকাঠি তা আরেকবার প্রমাণ করলেন অজোপাড়া গাঁওয়ের দ্বীপাঞ্চলের শিক্ষকেরা।
পদক পাওয়ায় নিজের অনুভূতি জানতে চাইলে উত্তর লেমশীখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোছাম্মৎ ফারহানা ইয়াছমিন বলেন, পদক পাওয়ার বিষয়টি শুনে সবার মতো আমিও খুশিতে আনন্দিত এবং উদ্বেলিত। সাথে অনুপ্রেরণাও যোগাচ্ছে এই পদক। শিশুদের নিয়ে কাজ করতে উৎসাহ যোগাবে নিঃসন্দেহে।তিনি বলেন,আমার স্কুলে শতভাগ শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উপস্থিত থাকে সারা বছর।শুধু তাই নয়,অনেক দূরদূরান্ত থেকে কাঁদা মিশ্রিত মেঠোপথ পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে আসে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যুৎ নেই যথাযত অবকাঠামো নেই,নেই উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাও। বিদ্যালয়ের চারদিকে লবণের মাঠ।তারপরও নিয়মিত পাঠদান ছাড়া ও ক্রীড়া সস্কৃতি চর্চা হয় নিয়মিত।তিনি বলেন, স্কুলের আঙিনা ও ছাঁদে ফুল এবং ফলের বাগান করে মনোরম পরিবেশ তৈরি করেছি।ওই ছাঁদ বাগানের ফল ও ফুল বিক্রি করে একজন প্রতিবন্ধি শিক্ষার্থীকে হুইল চেয়ার ও কিনে দিয়েছি। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ সাইফুল্লাহ এ প্রতিবেদককে বলেন,৪১৭ শিক্ষার্থী, ১১ জন শিক্ষক নিরলস পরিশ্রম করছি প্রধান শিক্ষিকার নেতৃত্বে। পরিবেশ বান্ধব শিক্ষার ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ে আমরা বারবার ভালো ফলাফলসহ এ বিদ্যালয় শ্রেষ্টত্ব ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।শুধু যে আমরা শিক্ষা পদকে সারা দেশে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছি তা নয়, ২০২২ সালে শেখ রাসেল রচনা প্রতিযোগিতায় ও আমাদের বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী ইউশা মেহজাবীন রিচি জাতীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে।
তাদের এসব প্রশংসনীয় কাজে উৎসাহ দিয়েছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি স্থানীয় এলাকাবাসী।নিয়মিত অভিভাবক সমাবেশ প্রতিবছর একাধিক উঠান বৈঠক করে বিদ্যালয়ের সুন্দর ও সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সবার সহযোগিতা রয়েছে বলে মনে করেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কুতুবদিয়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়ার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় দেশের ৬৫ হাজার ৬ শ' ৭২ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে পেছনে ফেলে শিক্ষা পদকে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করার পেছনে শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম রয়েছে। রয়েছে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কঠোর নজরদারী।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোসলেম উদ্দীন বলেন, নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি অতিক্রম করে উত্তর লেমশীখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এ অর্জন সত্যই গৌরবের। শিক্ষা অধিদপ্তর অনুসন্ধানসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দ্বীপাঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত এই বিদ্যালয়কে দ্বিতীয় সেরা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে কুতুবদিয়ার উত্তর লেমশীখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের যথার্থ মূল্যায়ন করেছেন।এতে এ বিদ্যালয় ও শিক্ষকদের ভাবমূর্তি আরো একধাপ এগিয়ে গেলো।যা অন্যদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকলো।
মতামত দিন