এ টি এম ফিরোজ মন্ডল
বিশেষ সংবাদাতা
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এর প্রকৃতিতে শ্রদ্ধার মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কার্যক্রম শুরু করেন। শুক্রবার (১ জানুয়ারি) সকালে দলের চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদের এবং মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু কাকরাইলে জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয় চত্বরে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এসময় বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে দলের ৩৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে এরশাদের প্রকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনায় দোয়া করেন নেতাকর্মীরা। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি-২ খন্দকার দেলোয়ার জালালী এসব তথ্য জানান।
সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে পার্টির ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, বিএনপি এখন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ডাক-চিৎকার করছে। বিএনপি কি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়েছে কখনও? তিনি বলেন, ‘বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মহাসচিব-সাধারণ সম্পাদক প্রায়ই বিভিন্ন ইস্যুতে বাহাস করছেন। কিন্তু তারা সবাই গণতন্ত্রের হাতে হাতকড়া পরিয়ে গণতন্ত্রের স্বাভাবিক স্বাদ নষ্ট করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপি গেলো ৩০ বছর ধরে সংবিধানের ৭০ ধারার অপব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষমতা ভোগ করেছে। সংসদ যেখানে সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করবে, সেখানে সরকারই সংসদকে নিয়ন্ত্রণ করছে। ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের কোনও পথ আর নেই। তাই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা দুর্নীতি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন।’
সভায় জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি বলেন, ‘গেলো ১০ থেকে ১২ বছরে যে অসাধারণ উন্নয়ন হয়েছে, তার কৃতিত্ব ধরে রাখা যাবে না—যদি প্রকৃত গণতন্ত্র না থাকে। এখন মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু জাতীয় পার্টির শাসনামলে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন ছিল না। এখন নির্বাচনে প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, সবাই জানে নির্বাচনের ফলাফল কী হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টির শাসনামলে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ছিল না। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ উন্নয়নের যে ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন, ’৯১ সালের পর থেকে সেই ভিত্তির ওপরেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।’
জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘২০২০ সাল শুধু করোনাকাল নয়, বাংলাদেশে ২০২০ সাল নারী ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের বছর। দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল গণতন্ত্রের জন্য, বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য। উন্নয়ন ও সুশাসনের জন্য দেশের মানুষ উন্মুখ হয়ে আছে, তারা পরিবর্তন চায়। তারা এরশাদের জাতীয় পার্টির শাসনামল ফিরে পেতে চায়। খুন, গুম, দুর্নীতি, দুঃশাসন, অন্যায় আর অবিচার থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে আগামী নির্বাচনে ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির সরকার গঠন করতে হবে।’
দলের কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘জাতীয় পার্টি এখন যেকোনও সময়ের চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ। যারা জাতীয় পার্টির অনৈক্য নিয়ে গল্প করছেন, তাদের বক্তব্য মিথ্যা প্রমাণ করে জাতীয় পার্টি দুর্বার বেগে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ জাতীয় পার্টির দিকে তাকিয়ে আছে। তারা দেখতে চায় জাতীয় পার্টির কেবিনেট গঠনের সক্ষমতা আছে।’
একই মিলনায়তনে সন্ধ্যায় জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সদস্যরা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির আহ্বায়ক শেরিফা কাদেরের পরিচালনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা করেন সাংস্কৃতিক পার্টির সদস্য সচিব আলাউদ্দিন আহমেদ।
সভায় অংশগ্রহণ করেন—কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি লিয়াকত হোসেন খোকা,এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, এস.এম. ফয়সল চিশতী, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, নাজমা আক্তার, উপদেষ্টা অধ্যাক্ষা রওশন আরা মান্নান, মাহমুদুর রহমান মাহমুদ, মেহেরুন্নেসা খান হেনা পন্নি, ভাইস-চেয়ারম্যান মোস্তফা আল মাহমুদ, আহসান আদেলুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ বেলাল হোসেন জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আবু সাঈদ স্বপন প্রমুখ।
এছাড়াও সকল বিভাগ ও জেলায় দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে এরশাদের প্রকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ, তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত , দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনায় দোয়া এবং আনন্দ মিছিল সহ নেতাকর্মীরা সারাদিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি ও আলোচনা সভার মাধ্যমে ৩৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছেন।