করোনায় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলার জন্য ব্যাংকগুলোয় টাকার প্রবাহ বাড়াতে বড় ধরনের ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সতেরো দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় আবারও নীতিনির্ধারণী সুদের হার ও নগদ জমা সংরক্ষণের হার বা সিআরআর (ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও) কমিয়েছে। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দুটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোয় নগদ টাকার প্রবাহ বাড়বে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ট্রেজারি বিল বা বন্ড বিক্রি করে নগদ টাকা নিতে পারবে।
জরুরি প্রয়োজনে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নির্ধারিত হারে নগদ অর্থ জমা রাখতে হয়। যা নগদ জমা সংরক্ষণের হার (সিআরআর) বলা হয়।
জরুরি প্রয়োজনে ব্যাংকগুলো এখান থেকে টাকা নিতে পারে। গত ২৩ মার্চের আগে দ্বি-সাপ্তাহিক গড় ভিত্তিতে মোট আমানতের সাড়ে ৫ শতাংশ এবং দৈনিক ভিত্তিতে ৫ শতাংশ জমা রাখতে হতো। ২৩ মার্চ এ হার দশমিক ৫০ শতাংশ কমিয়ে দ্বি-সাপ্তাহিক গড় ভিত্তিতে ৫ শতাংশ এবং দৈনিক ভিত্তিতে সাড়ে ৪ শতাংশ রাখার বিধান করা হয়। এ বিধান গত ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোয় অতিরিক্ত প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার বাড়তি জোগান এসেছে।
একই দিন অপর এক সার্কুলারের মাধ্যমে নীতিনির্ধারনী সুদের হার রেপোর (ট্রেজারি বিল পুনঃক্রয় চুক্তি) সুদের হার কমিয়েছে। সরকারকে ঋণের জোগান দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি সপ্তাহে একদিন সরকারি খাতের ঋণের উপকরণ ট্রেজারি বিল বা বন্ড নিলামের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করে। ব্যাংকগুলো প্রয়োজন মনে করলে এগুলো আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করে (রেপো) টাকা তুলে নিতে পারে।
এই সুদের হার ২৩ মার্চের আগে ছিল ৬ শতাংশ। ওই দিন এ হার দশমিক ২৫ শতাংশ কমিয়ে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ করেছে। যা ২৪ মার্চ থেকে কার্যকর হয়। এর ফলে ব্যাংকগুলো কম সুদে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা নিতে পারছে। গত ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব মোকাবেলায় ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেন। এর মধ্যে ৬৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকাই ব্যাংকিং খাত থেকে জোগান দিতে হবে।
এ অর্থের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক দেবে ১৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে রফতানি উন্নয়ন তহবিলের আওতায় ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা বা ১৫০ কোটি ডলার জোগান দিয়েছে। ব্যাংকগুলোকে ওই পরিমাণ অর্থের জোগান দিতে হলে তাদের তারল্য প্রবাহ বাড়াতে হবে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছাড় দিচ্ছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ দিনের মাথায় গত বৃহস্পতিবার আবারও কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেপো ও সিআরআরে আরও বেশি ছাড় দিল। এ দফায় সিআরআর কমানো হয়েছে ১ শতাংশ এবং রেপোর হার কমানো হয়েছে দশমিক ৫০ শতাংশ। নতুন সার্কুলার অনুযায়ী ব্যাংকগুলোয় মোট আমানতের বিপরীতে দ্বি-সাপ্তাহিক গড় ভিত্তিতে ৪ শতাংশ এবং দৈনিক ভিত্তিতে সাড়ে ৩ শতাংশ নগদ অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে হবে। যা কার্যকর হবে আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে। ফলে ব্যাংকগুলোয় টাকার প্রবাহ বাড়বে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা।
এ নিয়ে দুই দফায় সিআরআর দেড় শতাংশ কমানোর ফলে ব্যাংকিং খাতে নগদ টাকার প্রবাহ বাড়বে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। দ্বিতীয় দফায়ও রেপো সুদহার দশমিক ৫০ শতাংশ কমিয়ে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এ নির্দেশনা আগামী ১২ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। ফলে ব্যাংকগুলো আরও কম সুদে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা নিতে পারবে।