• ২০২৪ নভেম্বর ২২, শুক্রবার, ১৪৩১ অগ্রহায়ণ ৮
  • সর্বশেষ আপডেট : ১০:১১ পূর্বাহ্ন
English
পরিচালনাপর্ষদ
আমাদের সাথে থাকুন আপনি ও ... www.timebanglanews.com

টেকনাফের পাহাড়ে অপহৃতরা তিনদিনেও উদ্ধার হয়নি

  • প্রকাশিত ০১:১১ অপরাহ্ন শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪
টেকনাফের পাহাড়ে অপহৃতরা তিনদিনেও উদ্ধার হয়নি
টাইম বাংলা নিউজ
মোঃ এবাদুল্লাহ কক্সবাজার, জেলা প্রতিনিধি


কক্সবাজারের টেকনাফে পাহাড়ি ছরায় মাছ শিকারে গিয়ে অপহৃত শিক্ষার্থীসহ ৮ জনকে ৩দিনেও উদ্ধার করতে সক্ষম হয়নি শৃংখলা বাহিনী। উল্টো তাদের সন্ধানে পুলিশ ও এলাকার লোকজন পাহাড়ে অভিযান চালানোই ক্ষিপ্ত হয়েছেন অপহরণকারীরা। এখনো জন প্রতি ৩লাখ টাকা মুক্তিপণে অনড় থেকে বেশি বাড়াবাড়ি করলে অপহৃতদের প্রাণে মারার হুমকি দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার।

গত রবিবার বিকেলে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের জাহাজপুড়া পাহাড়ের ভিতর পানির ছড়া থেকে তাদেরকে অপহরণ করেছে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। সেদিন রাত হতে সোমবার ও মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযান চালিয়েও তাদের হদিস পায়নি শৃংখলা বাহিনী।

অপহৃতরা হলেন, বাহারছডা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডে জাহাপুড়া এলাকার রশিদ আহামদের ছেলে মোহাম্মদ উল্লাহ, ছৈয়দ আমিরের ছেলে মোস্তফা কামাল, মমতাজ মিয়ার ছেলে মো. রিদুয়ান, রুস্তম আলীর ছেলে সেলিম উল্লাহ, ছৈয়দ আমিরের ছেলে করিম উল্লাহ, কাদের হোসনের ছেলে নুরুল হক, তার ছেলে নুর মোহাম্মদ ও রশিদ আহমদের ছেলে আবছার।

অপহরণেরশিকার রিদুয়ানের পিতা মমতাজ জানান, আমার ছেলেসহ ৮জন পাহাড়ি খালে মাছ শিকারে গেলে পাহাড় থেকে নেমে আসা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা অস্ত্রে মুখে জিম্মি করে পাহাড়ে নিয়ে যায়। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পাবার পর এলাকার মেম্বার ও চেয়ারম্যানসহ থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করলে পুলিশ অভিযান চালায়। রবিবার রাত এবং সোমবার ও মঙ্গলবার সকাল-বিকাল-সন্ধ্যা পর্যন্ত পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি করেও তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

তিনি আরো জানান, অপহরণকারীরা রবিবার রাতে কল করে জন প্রতি ৩ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করে। পরের দিনও একইভাবে তারা টাকা দাবি করেছিল। মঙ্গলবার কল করে টাকা না দিয়ে পাহাড়ে পুলিশ পাঠানো এবং লোকজন মিলে কেন তাদের খোঁজা হচ্ছে এসব বিষয়ে প্রশ্ন তুলে। বাড়াবাড়ি করলে পরিনাম ভালো হবে না বলে শাসিয়েছে অপহরণকারি চক্র।

বাহারছড়ার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, কলেজ শিক্ষার্থীসহ ৮জন পাহাড়ী ছড়াতে সখ করে মাছ শিকারে গিয়ে অস্ত্রধারীদের কবলে পড়েন। পাহাড়ি এ এলাকা দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। কাউকে একা পেলে সুযোগ বুঝে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অপহরণ করতো। কিন্তু এবারের মতো এতগুলো লোক একসাথে নিয়ে যায়নি।

বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খোকন জানান, এঘটনা চরম আতংকের। অপহরণকারিরা শুধু রোহিঙ্গা হতে পারে না। তাদের সাথে স্থানীয় দুর্বৃত্তদের যোগসাজশ না থাকলে এলাকার লোকজনের নাম ঠিকানা এত ক্লিয়ারলি রোহিঙ্গারা জানার কথা নয়। কারা পুলিশের সাথে হাঁটতেছে, প্রশাসনের সাথে কারা যোগাযোগ করছে- অপহরণকারিরা তাদের মোবাইলে ফোন করে তার সবিশেষ বলে হুমকি দিচ্ছে, রোহিঙ্গাদের দ্বারা এটা কখনোই সম্ভব নয়।

চেয়ারম্যান খোকন আরো জানান, মঙ্গলবার ভোরে অপহরণকারিরা অপহৃত রিদুয়ানের বাবাকে ফোন করে তাদের জিম্মি থাকা একেক জনের কাছ থেকে একেক পরিমাণ টাকা তুলে তাদের (অপহরণকারী) দেখিয়ে দেয়া জায়গায় টাকাটি পৌঁছে দেয়ার জন্য নির্দেশনাও দেয়। সেভাবে অপহৃতদের পরিবার টাকাও জমা করেছিল, কিন্তু পরক্ষণে টাকা জমা নেয়া মমতাজ আবার টাকা ফেরত দিয়ে দেয়। অপহৃত কার পরিবারের আর্থিক অবস্থা কেমন তা অপহরণকারিরা কিভাবে জানলো তাও নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। ফিল্মী স্টাইলে এভাবে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবি কতটুকু দুঃসাহসিক ঘটনা তা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানি। অতীতে মুক্তিপণ না পেয়ে অপহৃতকে হত্যার রেকর্ডও রয়েছে। আমরা আতংকিত।

এদিকে, এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে অপহরণের শিকার পরিবারগুলোতে আতংক ও আহাজারি চলছে। কোন কোন পরিবার টুকটাক কথা বললেও অজানা শংকায় অনেকে কোনন কথায় বলছেন না। অপহৃত রিদুয়ানের মা রোকেয়া বেগম বলেন, অপহরণকারীদের দাবিকৃত এত টাকা আমরা কি করে দেব? এতো টাকা দেয়ার সামর্থ্য আমাদের নেই।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, অপহরণের বিষয়টি অনভিপ্রেত। আমরা খবর পেয়েই কিন্তু নানাভাবে কয়েকটি টিম পাহাড়ে কাজ করছি। কিন্তু অপহৃতদের স্বজনরা আমাদের কোন তথ্য দিয়েই সহযোগিতা না করায় আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। অপহরণকারিদের তথ্যের আদান-প্রদান বিষয়ে তথ্য দিলে আমরা আরেকটু এগুতে পারতাম। এরপরও আমরা থেমে নেই- সবার সহযোগিতায় অপহৃতদের অক্ষতভাবে রিকভারির একটি ভালো খবর সবাইকে জানাতে পারবো আশা করছি। অভিযান অব্যাহত রেখেছি আমরা।

সর্বশেষ