• ২০২৪ নভেম্বর ২৪, রবিবার, ১৪৩১ অগ্রহায়ণ ১০
  • সর্বশেষ আপডেট : ১২:১১ অপরাহ্ন
English
পরিচালনাপর্ষদ
আমাদের সাথে থাকুন আপনি ও ... www.timebanglanews.com

ছাত্ররা প্রাথমিক নিয়োগকর্তা, তারা যখন বলবে, আমরা চলে যাব: প্রধান উপদেষ্টা

  • প্রকাশিত ০৪:১১ অপরাহ্ন রবিবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৪
ছাত্ররা প্রাথমিক নিয়োগকর্তা, তারা যখন বলবে, আমরা চলে যাব: প্রধান উপদেষ্টা
জাতির উদ্দেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রথম ভাষণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে, সেটি দেশের মানুষের ওপর নির্ভর করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ছাত্ররা তাদের (উপদেষ্টা পরিষদের) প্রাথমিক নিয়োগকর্তা, তারা যখন বলবে, তখন তারা চলে যাবেন। 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেছেন তিনি। 

এছাড়া, নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের কয়েকদিনের মধ্যেই সব খাতের কর্মীদের দাবি নিয়ে না এসে একটু ধৈর্য ধারণ করার পরামর্শ দেন প্রধানউপদেষ্টা। তিনি বলেছেন, নতুন বাংলাদেশ গড়তে সরকারকে সবার সহযোগিতা করতে হবে।

রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন অধ্যাপক ইউনূস।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেয়ার ১৭দিন পর আজই প্রথম জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন অধ্যাপক ইউনূস।

২৬ মিনিট দীর্ঘ ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে সমর্থন দেয়ার জন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান অধ্যাপক ইউনূস। 

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দাবিতে আন্দোলনে নিহত ছাত্র–জনতাকে স্মরণ এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে ভাষণ শুরু করেন প্রধান উপদেষ্টা। 

দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময়ে দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সব খাতে সংস্কার করা হবে।

এছাড়া আয়নাঘরের মত অপকর্মের বিচার, রাজনৈতিক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং পুলিশ কমিশন গঠনের কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

জাতির উদ্দেশে দেয়া নিজের প্রথম ভাষণে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা এবং এজন্য আইনের নিপীড়নমূলক ধারা সংশোধনের কথাও বলেছেন অধ্যাপক ইউনূস।

চলতি মাসের পাঁচ তারিখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের তিনদিন পর আটই অগাস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।

পরদিন রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নেন উপদেষ্টারা।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে, এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, "কখন আমাদের সরকার বিদায় নেবে এর জবাব আপনাদের হাতে। কখন আপনারা আমাদেরকে বিদায় দেবেন।"

"আমরা কেউ দেশ শাসনের মানুষ নই। আমাদের নিজ নিজ পেশায় আমরা আনন্দ পাই। দেশের সংকটকালে ছাত্রদের আহ্বানে আমরা এ দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে দায়িত্ব পালন করবো," তিনি বলেন।

'কখন নির্বাচন হবে' এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, "এটা আমাদের সিদ্ধান্ত না। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে কখন আপনারা আমাদের ছেড়ে দিবেন। আমরা ছাত্রদের আহবানে এসেছি, তারা আমাদের প্রাথমিক নিয়োগ কর্তা।

“ দেশের আপামর জনসাধারণ আমাদের নিয়োগ সমর্থন করেছে। আমরা ক্রমাগতভাবে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে যাবো, যাতে হঠাৎ করে এ প্রশ্নটি উত্থাপিত না হয় আমরা কখন যাবো। তারা যখনই বলবে আমরা চলে যাব।”

এজন্য দরকারি সংস্কারের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকেও সংস্কার করা হবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা।

“আমরা বিভিন্ন সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। দেশবাসীকে অনুরোধ করবো একটা আলোচনা শুরু করার জন্য, আমরা সর্বনিম্ন কী কী কাজ সম্পন্ন করে যাবো। কী কী কাজ মোটামুটি করে গেলে হবে। এ আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটা দিক-নির্দেশনা পেতে পারি।"

"তবে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সেটা রাজনৈতিক আলোচনা থেকেই আসবে,” তিনি বলেন।

এ দিক-নির্দেশনা না পেলে দাতা সরকার ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনায় দৃঢ়তার সাথে অগ্রসর হওয়া যাচ্ছে না বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, "আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে মেয়াদবৃদ্ধির প্রস্তাব দেব না।”

'প্রত্যাশা পূরণে ধৈর্য ধরতে হবে' 

প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক, সে প্রত্যাশা পূরণে মানুষকে কিছুটা ধৈর্য ধরতে হবে।

তিনি বলেন, "প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ঢুকে ব্যক্তি-বিশেষকে হুমকির মধ্যে ফেলা, মামলা গ্রহণের জন্য চাপ সৃষ্টি করা বিচারের জন্য গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে আদালতে হামলা করে আগেই এক ধরনের বিচার করে ফেলার যে প্রবণতা তা থেকে বের হতে হবে।"

ছাত্র-জনতার বিপ্লবের গৌরব ও সম্ভাবনা এসব কাজে ম্লান হয়ে যাবে, নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রচেষ্টাও ব্যাহত হবে, বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ একটা বিশেষ ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা চাচ্ছি। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতিদিন সচিবালয়ে, আমার অফিসের আশেপাশে, শহরের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করা হচ্ছে। গত ১৬ বছরের অনেক দুঃখ-কষ্ট আপনাদের জমা আছে। সেটা আমরা বুঝি।"

"আমাদের যদি কাজ করতে না দেন তবে দুঃখ ঘোচানোর সকল পথ বন্ধ হয়ে যাবে। আপনাদের কাছে একান্ত অনুরোধ আমাদের কাজ করতে দেন”।

তিনি সবাইকে দাবি দাওয়া লিখিতভাবে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা আপনাদের বিপক্ষ দল নয়, আইনসঙ্গতভাবে যা কিছু করার আছে আমরা অবশ্যই তা করবো। কিন্তু আমাদেরকে ঘেরাও করে এ গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোতে আমাদের কাজে বাধা দেবেন না।"

"সবাই মিলে তাদের বোঝান তারা যেন এ সময়ে তাদের অভিযোগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আমাদের দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাধা না দেন।”


সর্বশেষ