০৬.০৯.২০২১
গর্ভধারীনী মা'কে হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করার অভিযোগে ক্লোজআপ ওয়ান তারকা গর্ভের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান সাজু আহমেদের বিরুদ্ধে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেছেন তার মা রানীজান বেগম।
রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘সাজুর বিরুদ্ধে তার মায়ের অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাটি প্রাথমিকভাবে তদন্ত করা হয়। এরপর মামলা রেকর্ড করে অভিযুক্ত সাজুকে গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে। বর্তমানে তিনি পলাতক রয়েছেন।’
অভিযুক্ত সাজু কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের তেলিপাড়া'র মৃত আজগর আলী এবং ভিকটিম ও বাদিনী রানীজান বেগমের ছোট ছেলে।
নিজ ছেলের হামলায় আহত হয়ে মাথায় গুরুতর জখম নিয়ে চার দিন ধরে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ভুক্তভোগী মা রানীজান বেগম। তার শারীরিক অবস্থা অনেকটা ভালো বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক পুলক কুমার সরকার।
ছেলের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে রানীজান বেগম বলেন, ‘আমি সাজুর কঠিন শাস্তি চাই, ওর যেন জেল হয়।’
ঘটনাটিকে নিজের ছেলের ভুল মনে করে তাকে ক্ষমা করবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে রানীজান বেগম বলেন, একবার হলে ভুল মনে করতাম। কিন্তু সে প্রতিনিয়ত আমাকে অপমান-অপদস্ত করে আসছে। আমার ছোট ছেলে এবং শিল্পী বলে আমি এতদিন কোনও অভিযোগ করিনি। যতদিন ওর অপমান সহ্য হয়েছে ততদিন সহ্য করেছি। কাউকে কিছু বলিনি। এখন ওর অপমান, নির্যাতন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, মারতে আসা এসব আর সহ্য করতে পারি না বাবা। ওর খারাপ আচরণে আমি অতিষ্ট হয়ে গেছি। তাই আমি ওর শাস্তি চাই। ওর শাস্তি দেখে যেন ওর মতো অন্য সন্তানরাও সতর্ক হয়ে যায়।
তবে হামলার অভিযোগে মা বাদী হয়ে মামলা করলেও নিজের ফেসবুক আইডিতে অসুস্থ মায়ের জন্য দোয়া চেয়ে পোস্ট দিয়েছেন সাজু আহমেদ। সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) ভোর রাতে দেওয়া পোস্টে সাজু লেখেন, ‘আমার মায়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন প্লিজ’।
একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলোকে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন। এর আগে 'তিস্তা ভয়েজ' এ দেয়া এক অডিও কথোপকথোনে তিনি (সাজু) দাবি করেছেন, ‘আমি জমির অংশ দাবি করেছি বলে আমার মা ও বড় বোন আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। আমি মায়ের ওপর আঘাত করিনি। আমাকে লক্ষ্য করে বড় বোনের ছোড়া ঢিল লক্ষভ্রষ্ট হয়ে আমার শরীরে না লেগে মায়ের মাথায় লেগেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।’
তবে মামলার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে সোমবার সন্ধ্যায় অভিযুক্ত সাজুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে সাজুর বড় বোনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি এবং মা পাশাপাশি ছিলাম। আর সাজু ছিল একটু দূরে আমাদের সামনের দিকে। আমি ওকে ঢিল ছুড়লে সেই ঢিল আমার পাশে থাকা মাকে কিভাবে লাগবে? ঢিল কি শব্দের প্রতিধ্বনির মতো ফেরত আসে?
উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ কবির বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। আমরা তাকে (সাজুকে) গ্রেফতারে চেষ্টা চালাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) জমিজমা সংক্রান্ত পারিবারিক কলহের জেরে ‘সাজুর ছোড়া ঢিলে’ মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হলে কপাল কেটে যায় তার মা রানীজান বেগমের। পরে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
নিজ মাকে আঘাত করার অভিযোগে অভিযুক্ত শিল্পী সাজু আহমেদ কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটির সদস্য এবং আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
এছাড়াও তিনি কুড়িগ্রাম সোসাইটি, ঢাকা নামের একটি সংগঠনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন। তবে মায়ের উপর হামলা করার মতো অপকর্মের জন্য ইতোমধ্যে সংগঠনটি তাকে বহিস্কার করেছে।
মাকে আঘাত করে জখমের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ জেলায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের শুভাকাঙ্খীগণ অভিযুক্ত সাজুকে কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ ও আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য পদ থেকে বহিস্কারের জোড় দাবী তুলছেন।
মতামত দিন