• ২০২৫ নভেম্বর ১৬, রবিবার, ১৪৩২ অগ্রহায়ণ ২
  • সর্বশেষ আপডেট : ০৭:১১ পূর্বাহ্ন
English
পরিচালনাপর্ষদ
আমাদের সাথে থাকুন আপনি ও ... www.timebanglanews.com

সরকার উৎখাতের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত ছিল না

  • প্রকাশিত ০৭:১১ পূর্বাহ্ন রবিবার, নভেম্বর ১৬, ২০২৫
সরকার উৎখাতের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত ছিল না
সিএনএন-নিউজ এইটিনকে শেখ হাসিনা
অনলাইন ডেস্ক

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের প্রধান ও ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনার উল্টো সুর শোনা গেল। ক্ষমতাচ্যুতির প্রায় ১৫ মাস পর এসে তিনি বলছেন, তাঁদের পতনের পেছনে আমেরিকা বা পশ্চিমা কোনো শক্তির সরাসরি ভূমিকা ছিল বলে তিনি মনে করেন না। অথচ গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পতনের পর

থেকেই হাসিনা এবং তাঁর সরকারের মন্ত্রী ও দলীয় নেতাকর্মীরা যুক্তরাষ্ট্রকেই দোষারোপ করে আসছিলেন। গতকাল শুক্রবার সিএনএন-নিউজ এইটিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন |

অন্যদিকে বিবিসিকে দেওয়া অন্য এক সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেছেন, গণ-অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে তাঁর কোনো দায় নেই। 

সিএনএন-নিউজ এইটিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাসিনা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের ভালো ও স্থিতিশীল সম্পর্ক রয়েছে। তাই ওয়াশিংটন বা অন্য কোনো বিদেশি শক্তি বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয়াদিতে সরাসরি জড়িত, এমন দাবি বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। তবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস পশ্চিমা বিশ্বে প্রভাবশালী অনেক ব্যক্তির সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছেন।

তিনি পশ্চিমা বিশ্বে প্রভাবশালী শ্রেণির প্রশংসা অর্জন করেছেন। পশ্চিমারা ড. ইউনূসের প্রশংসনীয় অর্থনৈতিক ভাবমূর্তিকে ভুলভাবে গণতান্ত্রিক যোগ্যতা হিসেবে দেখেছেন।

ক্ষমতা থেকে উত্খাত হওয়া আওয়ামী লীগের প্রধান আরো দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, যদি পশ্চিমারা মনে করে ইউনূস তাদের বন্ধু, তারা প্রতারিত হচ্ছে।

হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পরপরই আগস্টে ভারতের ইকোনমিক টাইমস তাঁকে উদ্ধৃত করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছে, কারণ তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ চায়। 

গত বছরের জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। প্রথমে এই আন্দোলন ছিল একেবারেই শান্তিপূর্ণ। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তার ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগকে শিক্ষার্থীদের দমনে মাঠে নামালে সহিংসতা শুরু হয়।

একইভাবে লেলিয়ে দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের। তাদের উন্মত্ততায় রাজপথে বয়ে যায় রক্তের নদী। এক পর্যায়ে আন্দোলন রূপ নেয় সরকার পতনের এক দফা দাবিতে। তীব্র জনরোষের মুখে শেখ হাসিনা আর টিকতে পারেননি। পালিয়ে যান ভারতে। তার আগে-পরে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী-এমপি ও নেতাকর্মী। এমনকি পুলিশ-প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাও গাঢাকা দেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, জুলাই-আগস্টে অভ্যুত্থান চলাকালে এক হাজার চার শর বেশি মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। যাঁদের বেশির ভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর চালানো সামরিক অস্ত্র ও শটগানের গুলিতে মারা যান। জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদন অনুসারে, এই হত্যাকাণ্ডসহ দমন-পীড়নে সমন্বয়কের ভূমিকায় ছিলেন শেখ হাসিনা। এ বছরের জুলাইয়ে বিবিসিতে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। যেখানে শেখ হাসিনার কথোপকথনের একটি ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং থেকে জানা যায়, জুলাইয়ে আন্দোলন চলাকালে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের অনুমতি তিনি নিজেই দিয়েছিলেন। বিবিসির যাচাই করা ওই রেকর্ডিং অনুসারে, শেখ হাসিনা তাঁর নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছেন।

ওই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, ষড়যন্ত্র ও সম্পৃক্ততার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের রায়ের দিন নির্ধারণ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আগামী ১৭ নভেম্বর সোমবার।

মানবতাবিরোধী অপরাধে দায় নেই : বিবিসিকে দেওয়া অন্য সাক্ষাৎকারে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করা মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা মানবতাবিরোধী অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পূর্বনির্ধারিত রায়ের অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

বিবিসিকে ই-মেইল দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর অনুপস্থিতিতে যে বিচার চলছে, তা ক্যাঙ্গারু কোর্টের সাজানো প্রহসন এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনি আরো জানান, তাঁর আইনজীবী বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে আন্দোলন দমনে হত্যায় উসকানি, প্ররোচনা এবং সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটিসহ পাঁচ অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের দাবি করা হয়েছে। একই মামলায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকেও আসামি করা হয়েছে। প্রোসিকিউশন কামালের বিরুদ্ধেও মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন।

শেখ হাসিনা দাবি করেছেন, আন্দোলন দমনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলেও তিনি কখনো নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেননি। তিনি এই মামলাকে রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

শেখ হাসিনার দাবি অনুযায়ী, এই মামলা ও অন্যান্য মানবাধিকারসংক্রান্ত অভিযোগ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনি দাবি করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে যেকোনো দোষ প্রমাণ করতে হলে তা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে করা উচিত। সূত্র : সিএনএন-নিউজ এইটিন ও বিবিসি


সর্বশেষ