• ২০২৪ নভেম্বর ২২, শুক্রবার, ১৪৩১ অগ্রহায়ণ ৭
  • সর্বশেষ আপডেট : ০১:১১ পূর্বাহ্ন
English
পরিচালনাপর্ষদ
আমাদের সাথে থাকুন আপনি ও ... www.timebanglanews.com

অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু পরিবহনের সুবিধার্থে ব্রহ্মপুত্র নদে পানি প্রবাহ বন্ধ করে রাস্তা নির্মাণ

  • প্রকাশিত ০১:১১ পূর্বাহ্ন শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪
অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু পরিবহনের সুবিধার্থে ব্রহ্মপুত্র নদে পানি প্রবাহ বন্ধ করে রাস্তা নির্মাণ
অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু পরিবহনের জন্য নদের বুকে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে
মোঃ আব্দুল কাদের, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

১৮.০১.২০২২

শুকনো মৌসুম হওয়ায় এবং ব্রহ্মপুত্র এখন অনেকটাই শান্ত থাকায় অসাধু বালু ব্যবসায়ীদের নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহােৎসব চলছে। আর অবৈধভাবে উত্তোলিত এসব বালু পরিবহনের সুবিধার্থে নদের বুকে নির্মাণ করা হয়েছে সড়ক।

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের কর্তিমারী নৌকা ঘাটে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি প্রবাহ বন্ধ করে প্রায় ২০০মিটার দৈর্ঘের রাস্তা নির্মাণ করছে স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী ও ট্রাক্টর মালিকরা। 

চরের ফসল পারাপারের অজুহাত দেখালেও মূলত বিক্রির উদ্দেশ্যে নদ থেকে বালু উত্তোলন করে সেই বালু পরিবহনের জন্য এই রাস্তা নির্মাণ করেছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। 

কর্তিমারী খেয়া ঘাটের ইজারাদার ও যাদুরচর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন অভিযোগ করে বলেন, যাদুরচর ইউনিয়ন ট্রাক্টর (কাঁকড়া গাড়ি) মালিক সমিতির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমানসহ ৪০টি ট্রাক্টরের মালিক নিজেদের অর্থ ব্যয় করে ব্রহ্মপুত্র নদে রাস্তাটি নির্মাণ করছেন। তিনি বলেন,‘ এর আগে ২০২১ সালের জানুয়ারিতেও একই কায়দায় বালুখেকো চক্রটি ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে একই জায়গায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করার জন্য একটি রাস্তা নির্মাণ করেন। বিষয়টি নিয়ে ওই সময় স্থানীয় প্রশাসনকে জানালেও কোনো প্রতিকার মেলেনি। পরে বন্যার সময় রাস্তাটি ভেঙে গেছে। ওই ঘাট ইজারাদার আব্দুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কর্তিমারী নৌকা ঘাটটি ১লাখ বিশ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য লিজ নিয়েছেন তিনি। ওই নৌকা ঘাটে ব্রহ্মপুত্র নদে রাস্তাটি নির্মাণ করায় খেয়ার নৌকা চলাচলে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে আর্থিকভাবে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় প্রতি বছর বর্ষার সময় নদের তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। অনেকের বসতভিটা, ফসলিজমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদের গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। গত বছর ওই এলাকায় শতাধিক পরিবার নদের ভাঙনে বাস্তুহারা হয়েছে। কর্তিমারী নৌ ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে একটি রাস্তা নির্মাণ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন ট্রাক্টর মালিক ও তাদের শ্রমিকরা। কয়েকটি ট্রাক্টর দিয়ে চর থেকে বালু এনে নদের পানি প্রবাহ বন্ধ করে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রভাবশালী এসব বালু ব্যবসায়ী ও ট্রাক্টর মালিকদের ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে সাহস করছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভাঙনের শিকার স্থানীয় কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, প্রতি বছর ড্রেজার মেশিন আর ট্রাকটরে করে নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় বন্যার সময় এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। এতে গত বছর বসতভিটা হারিয়ে নি:স্ব হয়েছেন নদতীরবর্তী দেড় শতাধিক পরিবার। এছাড়াও নদের ভাঙনে বেড়িবাঁধের (চাক্তাবাড়ি-ধনারচর-রাজিবপুর বেঁড়িবাঁধ) একাংশ, মসজিদসহ কয়েকশত হেক্টর ফসলিজমি বিলিন হয়ে গেছে। কিন্তু বেপরোয়া বালু ব্যবসয়ীদের কোনও ভাবেই থামনো যাচ্ছে না। নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানান স্থানীয়রা। 

ব্রহ্মপুত্রের বুকে রাস্তা নির্মাণের কথা স্বীকার করে রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়ন ট্রাক্টর মালিক সমিতির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দিগলাপাড়ার টোটাল জমাজমি চরে। আমরা যেমন বালু আনবো (উত্তোলন) তদ্রুপ আমাদের ফসলাদিও আনা দরকার। এ জন্য রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এটা নিজেদের অর্থেই নির্মাণ করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনই মূল উদ্দেশ্য কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাক্টর মালিক সমিতির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, ‘হ্যাঁ, বালু তো কাটবোই, এটা আমাদের ব্যবসা। রৌমারীর অনেক স্থানেই নদ-নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে জানিয়ে রেল-নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি, রৌমারী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহ আব্দুল মোমেন বলেন, এ উপজেলা অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের স্বর্গরাজ্য। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এরা বেপরোয়া। প্রশাসন সব কিছু জানার পরও বেশিরভাগ সময় নীরব থাকে। নদী ভাঙনে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগকেও এঁরা আমলে নেন না। নদের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্থ করাসহ এসব অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের জোড় দাবি জানাচ্ছি।


বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-র উত্তরাঞ্চলের সমন্বয়কারী তন্ময় সান্যাল বলেন, বালুমহাল ছাড়া বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ অনুযায়ী বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনও আবাসিক এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে উন্মুক্ত স্থান বা নদীর তলদেশ হতে বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ। একই আইনে বালু বা মাটি উত্তোলন ও বিপণনের উদ্দেশ্যে ড্রেজিংয়ের ফলে কোনও নদীর তীর ভাঙনের শিকার হতে পারে , এরূপ ক্ষেত্রে বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ। এসব অপরাধে অনূর্ধ্ব দুই বছরের কারাদণ্ড ও সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে।


উল্লেখ্য যে, কুড়িগ্রামে কোনও বালুমহাল নেই। তবে বছরজুড়েই এ জেলার প্রায় প্রতিটি নদ-নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রির মহোৎসব চলে। অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের ফলে সৃষ্ট নদীভাঙনে শত শত পরিবার বাস্তুহারা হলেও অবৈধ এই কাজ বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন কার্যকর কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। মাঝে মাঝে দায়সারা কিছু অভিযান পরিচালিত হলেও নদ-নদী অববাহিকায় বালু লুটের চিত্র অপরিবর্তিতই থাকে।


 এ বিষয়ে জানতে চাইলে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল ইমরান বলেন, বিষয়টি জানার পরপরই সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের তহশীলদারকে পাঠিয়ে নদের বুকে সড়ক নির্মাণ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছি। এরপরও এমন কাজ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ