রাত পোহালেই সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোটগ্রহণ চলবে। ইতিমধ্যে ভোট গ্রহনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন।
কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছানো হয়েছে নির্বাচনী সরঞ্জাম। লাগানো হয়েছে সিসি ক্যামেরাও।
জানা যায়, নগরীর ৪২ টি ওয়ার্ডের ১৯০ টি ভোট কেন্দ্রে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ভোটের জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ভবন থেকে সিসি টিভির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্র অনুযায়ী, নগরে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫ জন। মেয়র পদে ৮ জন, সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৭৩ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৮৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১৯০টি কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ রয়েছে ১ হাজার ৩৬৪টি।
গত সোমবার থেকে মাঠে নেমেছেন ১৪ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। মাঠে নিয়োজিত থাকবেন ৪২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও। এমনকি সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনকে ঘিরে পুরো নগরীকে গড়ে তোলা হচ্ছে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়।
সিসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার ফয়সাল কাদের বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে যাতে অনাকাঙ্খিত কোনো ঘটনা ঘটতে না পারে-এজন্যে নগরকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হচ্ছে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে , পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন এই লক্ষ্যে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে।
এছাড়াও র্যাব ও পুলিশের নিজস্ব মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। ভোট কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে কঠোর নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয়েছে। যদি কোনো কেন্দ্রে বা কেন্দ্রের বাইরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়-তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃংখলা বাহিনী শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করবে। নির্বাচনী অপরাধ কেউ করলে তাৎক্ষণিক বিচারের জন্যে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে থাকবেন।
জানা যায়, সিসিকের ৪২টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৪২টি মোবাইল টিম নিয়োজিত থাকবে। প্রতি তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডের জন্যে থাকবে পুলিশের ১৪টি স্পেশাল স্ট্রাইকিং ফোর্স। ৪২টি ওয়ার্ডের জন্যে থাকবে র্যাবের ২২টি মোবাইল টিম।
এছাড়াও র্যাব-পুলিশের সাদা পোষাকের পৃথক পৃথক বিশেষ টিম সার্বক্ষণিক মাঠে মোতায়েন থাকবে। একটি সাধারণ ভোট কেন্দ্রে ৫ জন সশস্ত্র পুলিশ ও ১২ জন আনসারসহ মোট ১৭ জন দায়িত্ব পালন করবেন। গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ ভোট কেন্দ্র বিবেচনায় পুলিশ আলাদাভাবে নিরাপত্তা গ্রহণ করবে বলে রিটার্নিং অফিসার জানিয়েছেন।
নির্বাচনে আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণে ভোট গ্রহণের আগের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার থেকেই মাঠে নামছে ১০ প্লাটুন বা ৫০০ বিজিবি সদস্য। ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে বিজিবি সদস্যরা সার্বক্ষণিক মাঠে থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে মোট ৪২ ওয়ার্ডের জন্যে থাকবেন ৪২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
এছাড়াও নির্বাচনী অপরাধসমূহ আমলে নিয়ে তা সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচার সম্পন্নের লক্ষ্যে বিচার বিভাগের ১৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সোমবার থেকেই মাঠে নেমেছেন। নির্বাচনকালীন আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে টানা ৫ দিন মাঠে থাকবেন তারা।
এর আগে গত ১০ জুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, যখন ব্যালট ওপেন হবে, তখন আমরাও সেটি পর্যবেক্ষণ করব সিসিটিভির মাধ্যমে। তিনি আরও বলেন, ‘কেউ যদি ভোট দিতে গিয়ে দেখেন তাঁর ভোট অন্য কেউ দিয়ে দিয়েছেন, তবে যাঁরা ‘মিডিয়া’ (গণমাধ্যমকর্মী) তাঁদের চিৎকার দিয়ে জানাবেন, ‘‘আমি গিয়েছিলাম, আমার ভোট আমি দিতে পারিনি।” যদিও এমন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম। এরপরও যদি কেউ মনে করেন, তিনি তাঁর ভোটটি দিতে পারেননি, সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার দিয়ে জানাবেন, আমরা সেটি আমলে নেব।’ ইভিএম প্রসঙ্গে সিইসি আরও বলেন, ‘আমরা প্রচলিত যে সিস্টেম, তাতে দেখেছি কোনোভাবেই একজনের ভোট আরেক জায়গায় যায় না, যায় না, যায় না। সেই নিশ্চয়তা দিতে চাই। ১০০ পেজের একটি ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারতে পারেন, কিন্তু ইভিএমে কোনোভাবেই তা সম্ভব না। ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে ব্যালট ওপেন করতে হয়।’
সিলেট সিটি নির্বাচনে সব ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা থাকবে জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করা হবে। নগরীর ৪২ টি ওয়ার্ডের ১৯০টি কেন্দ্রের সবগুলোতেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) চলবে ভোট। এই ১৯০টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২টিকেই অতি গুরুত্বপূর্ণ বলে ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সে হিসেবে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ভোটগ্রহণের জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা।
মতামত দিন