কক্সবাজার আওয়ামী সরকারের চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী সিন্ডি কেটের অন্যতম মাস্টার মাইন্ড কাসেম আলী। আ-ও-য়ামী স্বৈরাচারী স-রকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন কারীদের উপর সন্ত্রাসী হামলার রসদদাতা ও অস্ত্র দাতা হিসেবে আলোচনায় আসে মাস্টার মাইন্ড কাসেম আলী।
জানা যায়, বৈষম্য বিরুধী ছাত্র-আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করার জন্য কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকার টোকাই ও ছাত্রলীগকে অর্থ দিয়েছিলো এই মাস্টারমাইন্ড।
এছাড়াও এই আ-ও-য়ামী নেতা কক্সবাজার জেলা বি-এনপি'র কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলা ও অগ্নি সংযোগ এর সাথে সরাসরি জড়িত ছিলো বলে জানা যায়, এবং সদর থানায় উক্ত ঘটনায় একটি এজেহারে তার নাম দেখা গেল ও একটি চক্র টাকার বিনিময়ে পরবর্তীতে কাসেম আলীর নাম বাদ পড়ে যায়। তার কারণ কি জানতে চাই ও স্থানীয়রা।অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে তার গোপন রহস্য।
রামু উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল নন্দাখালী জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করা কাসেম আলী হঠাৎ বনে যায় শত কোটি টাকার মালিক। চলাচল করেন নিজস্ব একটি প্রাইভেট কার ও একটি জীপ নিয়ে।
কক্সবাজার লাবণী বীচের মক্কা ও বিরাণী হাউজ নামের একটি ভাতের হোটেল চালাতেন কাসেম আলী। কিন্তু ভাতের হোটেল এর আড়ালে ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েন তিনি, ২০১৫ সালে চকরিয়ায় আটক হয়েছিলেন পুলিশের হাতে।
পরে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হয় কাসেম আলী কে। এরইমধ্যে তার অবৈধ ব্যবসা চালু রাখার জন্য সখ্যতা গড়ে তুলেন আ-ও-য়া-মী নেতাদের সাথে। সূত্র মতে অবৈধ ব্যবসা ধরে রাখার জন্য ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতেন জেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতাদের।
আওয়ামী নেতাদের ম্যানেজ করে ও কালো টাকার বিনিময়ে বাগিয়ে নিয়েছেন কক্সবাজার পৌর আ-ও-য়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ পদ, হয়েছেন বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য। সৈকত ঝিনুক মার্কেট বহুমুখী শিল্পী সমিতির সভাপতিও বর্তমানে তিনি। সৈকত ঝিনুক মার্কেট ব্যবসায়ীদের একপ্রকার জিম্মি করে রাখতেন তিনি। অনেক ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা দিয়ের জেল খাটিয়েছেন কাসেম ,নিয়মিত চাঁদা না দিলে ব্যবসায়ীদের দিতেন হুমকি। বহু ব্যবসায়ীদের দোকান দখল করেছে কাসেম আলী সিন্ডিকেট। ভুক্তোভোগীরা প্রশাসনের কাছে বিচার দিলেও কোন সুরাহা না পেয়ে পথ বসেছে অনেক বীচ ব্যবসায়ী। ইন্ডেপেন্ডেন্ট টিভির অনুসন্ধানীমূলক অনুষ্ঠান তালাশের ২৬২ নং পর্বে (২২শে মার্চ ২০২৪) তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদনও করা হয়।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী নির্বাচন পরিচালনা কমিটির তত্বাবধায়ক ও সাবেক সচিব কবির বিন আনোয়ার এর সাথে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে থাকাকালীন সময়ে কাসেম আলীর গভীর সখ্যতা গড়ে উঠে। এরই ফলে কক্সবাজারের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বড় বড় টেন্ডার তার গড়া মেসার্স মক্কা কন্সট্রাকশন এর নামে অবৈধভাবে ভাগিয়ে নিতেন কাসেম আলী সিন্ডি কেট এবং রাতারাতি বনে যান শত কোটি টাকার মালিক। সাবেক এই সচিবের কক্সবাজারস্থ সকল অবৈধ সম্পদ দেখাশোনা করে কাসেম আলী। কক্সবাজারের রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নে স্ত্রী রোজিনা আক্তারের নামে আছে নির্মানাধীন একটি বহুতল ভবন। নামে-বেনামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান করে একাধিক ব্যাংক থেকে কোটি টাকার লোন নিয়েছেন এই আওয়ামীলীগ নেতা। এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের ভো-ট কার চুপি করার দায়ত্ব পালন করেছিলেন কাসেম আলী।
কাসেম আলীর পিতার নাম মরহুম মোহাম্মদ শরিফ, স্থায়ী ঠিকানা রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা হলেও বর্তমানে স্থায়ীভাবে থাকেন কক্সবাজার পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের টেকপাড়ায় (আমেনা খাতুন স্কুল এলাকায়) অবৈধ অর্থে করা শরিফ ম্যানশনে। স্থানীয় সূত্র ও কাগজপত্র অনুসন্ধানে জানা যায়, নিজ গ্রাম নন্দাখালীর পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রয় করেছেন অনেক আগে, কিন্তু প্রতারণার আশ্রয় নেয়ার জন্য সরকারি বা বেসরকারি ডকুমেন্টে জোয়ারিয়ানালার নন্দাখালী গ্রাম স্থায়ী ঠিকানা এবং বর্তমান ঠিকানা হিসেবে সৈকত বীচের মক্কা এন্ড বিরানি হাউজকে ব্যবহার করেন। উক্ত অভিযোগের ব্যাপারে একাধিক উপায়ে অভিযুক্তের সাথে যোগাযোগ করা করা হলে তিনি বলেন দুই টাকার সাংবাদিকরা আমার বিরুদ্ধে প্রতিদিন লেখালেখি করলেও আমার কিছুই হবে না? প্রতিদিন আমার বিরুদ্ধে লেখ। গত ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে হাসিনা সরকারের পতনের পর কাসেম আলীও আত্মগোপনে চলে যায়।
কোটা আন্দোলনের সময় আওয়ামী সন্ত্রাসীদেরকে অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র এবং টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন এ কাশেম আলী।
তিনি এক সময় মানব পাচারের সাথে ও সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন, তার আপন ভাগ্নি জামাইকে ও অবৈধভাবে সাগরপথে মলেশিয়া পাঠানোর সময় টেকনাফ হোয়াইকং পুলিশ ফাঁড়ির আইছি বখতিয়ার গোপন সমবাদের ভিত্তিতে খবর পাই। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ অভিযান করে অবৈধভাবে সাগরপথে মালেশিয়া পাড়ি দেওয়া লোকজনদেরকে আটক করেন। উক্ত চালানে কাসেম আলীর আপন ভাগ্নি জামাইও আটক হয়ে। পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর বেরিয়ে আসে কাশেম আলীর গোপন রহস্য।
এরপর কাসেম আলী সঙ্গে সঙ্গে সাদা একটি মাইক্রোবাস গাড়ি নিয়ে ছুটে যান হুয়াইকং পুলিশ পাড়িতে। সেখানে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছাড়িয়ে আনেন তার আপন ভাগ্নি জামাই সহ অনেককে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে বাঁকখালী লঞ্চঘাট ও নুনিয়াছড়া লঞ্চঘাটের ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের ২৭/০৬/২০২৪ তারিখে চতুর্থ দফার টেন্ডার মেসার্স মক্কা কনস্ট্রাকশন নামে নেওয়া হয়। এবং( ০১/০৭/২০২৪ইং হতে ৩০/০৬/২০২৫ইং)ইজারা প্রদানের নিমিত্তে গত ২৭/০৬/২০২৪ চতুর্থ দফার টেন্ডার এক কোটি ৪৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা মূল্যে দিয়ে কাসেম আলী নামে ঘাট- পয়েন্ট ইজারা নেই। এরপর উক্ত কাগজে (মোঃ কামরুজ্জামান)উপ- পরিচালক (ভাঃ)পরিবহন বিভাগ,বাঅনৌপক,চট্টগ্রাম ৩০/০৬২০২৪ নিজ হাতে দস্তক করেন।
কাসেম আলী এসব টাকা কোথায় পেয়েছে তা খতিয়ে দেখার জন্য দুদকের অনুসন্ধানী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন কক্সবাজারের সচেতন মহল।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসী কাসেম আলীকে অতি শীঘ্রই গ্রেপ্তার করা না হলে, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত পর্যটন নগরী কক্সবাজারে অপরাধের সংখ্যা আরো দিন দিন বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করেছেন কক্সবাজারের সচেতন মহল।
মতামত দিন