সারাদেশে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় 'গভীর উদ্বেগ' প্রকাশ করে একটি বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এই বিবৃতি পাঠানো হয়।
এতে বলা হয়, "অন্তর্বর্তী সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে কতিপয় ব্যক্তি ও গোষ্ঠী সারাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করছে।"
"সরকার এ ধরনের কর্মকাণ্ড শক্তভাবে প্রতিহত করবে," বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরো বলা হয়, "অন্তর্বর্তী সরকার নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় প্রস্তুত। কোনো ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হলে দায়ী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেবে এবং দোষীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাবে।"
দু'দিন ধরে ঢাকায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়িসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি-ঘর ও শেখ মুজিবের প্রতিকৃতি ভাঙচুর করা হয়।
এসব ঘটনায় সরকারের দিক থেকে সেভাবে শক্ত অবস্থান দৃশ্যমান ছিল না।
ফলে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
এমন প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার বিকেলে সরকারের পক্ষ থেকে একটি লিখিত বিবৃতি দেওয়া হয়।
তাতে বলা হয়, "ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত।"
একই সঙ্গে বলা হয়, "পলাতক অবস্থায় ভারতে বসে জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে জনমনে গভীর ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে এবং এর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।"
এরপর রাতে দেওয়া বিবৃতিতে সরকারের শক্ত অবস্থানের কথা তুলে ধরা হয়।
ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবের বাড়িতে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত ভাঙচুর চলছিল।
টানা দুই দিন এক্সক্যাভেটর ব্যবহার করে ভাঙা বাড়িটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
সেই ধ্বংসস্তূপ থেকেই ভবন ভাঙার হাতুড়ি দিয়ে দেয়ালের রড বের করে তা সংগ্রহ করেন কেউ কেউ।
বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা সাংবাদিকদের বলছিলেন, ভবনটি সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে না দেয়া পর্যন্ত এই স্থান থেকে যাবেন না তারা।
বুধবারের মত বৃহস্পতিবার রাতেও বিপুল সংখ্যক উৎসুক মানুষের উপস্থিতি ছিল ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে।
একদিকে ভাঙার কর্মকাণ্ড চলছিল অন্যদিকে দেখা যায় রান্নার আয়োজন।
বাংলাদেশের ঢাকায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ভাঙচু্র ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ভারত সরকার একটি বিবৃতি দিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালকে উদ্ধৃত করে সেখানে বলা হয়েছে, “শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি দখলদার বাহিনী ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের বীরোচিত প্রতিরোধের মূর্ত প্রতীক ছিলেন, তার ঐতিহাসিক বাসভবনটি যেভাবে পাঁচই ফেব্রুয়ারি ধ্বংস করা হয়েছে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।”
“সেই স্বাধীনতার সংগ্রাম বাংলার পরিচিতি ও গর্বকে লালন করেছিল। আর যারাই সেই লড়াইকে মর্যাদা দেন তারাই জানেন বাংলাদেশের জাতীয় চেতনার ক্ষেত্রে এই বাসভবনটির গুরুত্ব কতটা ছিল!” বলা হয় ভারতের বিবৃতিতে।
এতে আরো বলা হয়, “এই হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা তীব্র নিন্দনীয়!”
ঢাকায় ভারতের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এর আগে বাংলাদেশ সরকার তাকে যে বার্তা দিয়েছে সে ব্যাপারে দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
বাংলাদেশে গত কয়েক দিন আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুরের কথা উল্লেখ করে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জুলুম করে কেউ টিকে থাকতে পারে না।
বৃহস্পতিবার দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে অনলাইনে কথা বলেন শেখ হাসিনা। যেটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সরাসরি প্রচার করে দলটি।
শেখ হাসিনা বলেছেন, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ ঘর-বাড়ি পোড়ানোর ঘটনা একটি বড় অপরাধ।
“এতো জুলুম করে কেউ টিকতে পারে না ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না," বলেন তিনি।
গত পাঁচই অগাস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। সেখান থেকেই অনলাইনে কথা বলেছেন তিনি।
বুধবার অনলাইনে শেখ হাসিনার বক্তব্য দেয়ার ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ঢাকায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বাসভবন 'সুধাসদনে' হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
এছাড়া, খুলনা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুরসহ দেশের আরো কয়েকটি স্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের মন্ত্রী, এমপিসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি ও শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়।
অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে তার ধানমন্ডির বাসা থেকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা কার্যালয়ে রাত আটটা নাগাদ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে।
বিবিসি বাংলাকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান রেজাউল করিম মল্লিক।
তিনি বলেন, "তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। আমাদের কাছে খবর আছে সে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সে অভিযোগে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে।"
তাকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে কিনা এ প্রশ্নে জানান, এখনও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। সেটি পরে জানানো হবে।
গত কয়েকদিন যাবত অভিনেত্রী শাওন ফেসবুকে অন্তর্বর্তী সরকার ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের নিয়ে সমালোচনা করে পোস্ট দিয়েছেন।
তিনি প্রয়াত লেখক হুমায়ুন আহমেদের স্ত্রী।
মতামত দিন