০৫.০৭.২০২১
মায়ের কাছে ঢাকায় যাওয়ার উদ্দ্যেশ্যে চাচার বাড়ী চিলমারী থেকে পায়ে হেঁটে রওয়ানা দিয়ে উলিপুরে পৌঁছা রুমিকে অবশেষে মায়ের সম্মতিতে মামা-মামীর নিকট হস্তান্তর করেছেন উলিপুর থানা পুলিশ।
এরশাদুল হক ও কাজলী বেগমের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে প্রায় নয় মাস আগে। তাদের দুই সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান সুমাইয়া বেগম রুমির(৮) আশ্রয় হয় বাবার কাছে আর ছোট সন্তান কামরুল হাসান(৬) ঠাঁই পায় মায়ের কাছে।
ছেলে কামরুলকে নিয়ে মা কাজলী বেগম ঢাকায় গার্মেন্টেসে কাজ করতে চলে গেছেন আর স্বামী এরশাদুল হক মেয়ে সুমাইয়াকে দিনমজুর ছোট ভাই মমিনুলের জিম্মায় রেখে কাজের সন্ধানে চলে গেছেন চট্টগ্রামে।
গত ১ জুলাই চাচা মমিনুলের বাড়ি কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়নের পাত্রখাতা গ্রাম থেকে সুমাইয়া বেগম রুমি মায়ের কাছে যাওয়ার উদ্দ্যেশ্যে পায়ে হেঁটেই রওয়ানা দেয়। দীর্ঘ ১৫ কিলোমিটার পথ হেঁটে পৌঁছে উলিপুর উপজেলা শহরে। অভূক্ত ক্লান্ত শিশুটি দিশা না পেয়ে আশ্রয় নেয় রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের বারান্দায়। এখানে অনেক লোকজন দেখে ভয়ে কাঁদতে থাকে সে। তার কান্নায় কৌতুহলী লোকজন জিজ্ঞাসাবাদের পর জানতে পারেন মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য সে চাচার বাড়ী থেকে বের হয়েছে। ঢাকা কতদূর জানে না সে। কিন্তু অদম্য বাসনা যেভাবে পারে মায়ের কাছে যাবে। তাই সে হেঁটেই রওয়ানা দিয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদের পর স্থানীয় লোকজন রুমিকে উলিপুর থানা হেফাজতে পৌঁছে দেয়। এখানেই ৪ জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় রুমিকে। এরমধ্যে উলিপুর থানা পুলিশ আন্তরিকভাবে তার আত্মীয়-স্বজনদের খুঁজতে থাকেন। পরে স্বজনদের উপস্থিতিতে রুমিকে ৪ জুলাই রাত ৯টার দিকে মামা সফিকুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সফিকুল ইসলাম জানান, এরশাদুল হক ও কাজলী বেগমের ৯ মাস আগে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এই পরিস্থিতিতে কন্যা রুমিকে তার পিতার কাছে রেখে পুত্র কামরুলকে সঙ্গে নিয়ে গার্মেন্টসে কাজ করার জন্য ঢাকায় চলে যান কাজলী। এদিকে পিতা এরশাদুল তার ছোট ভাই দিনমজুর মমিনুলের কাছে কন্যা রুমিকে রেখে চট্টগ্রামে কাজের উদ্যোশে চলে যায়। সেখানে এরশাদুল রিক্সা চালায়। কন্যার কোন খোঁজখবর নিত না। ফলে চাচার বাড়িতে ভালো ছিল না রুমি। অবহেলা আর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য চাচার বাড়ি থেকে বের হয়েছিল সে।
এদিকে স্বজনদের খোঁজ না পেয়ে উলিপুর থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ডেস্কের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়েছে রুমিকে। এখানেই এএসআই আসমাউল হুসনা’র তত্ত্বাবধানে ছিল সে। এসময় থানার সকল পুলিশ সদস্য রুমির খোঁজখবর নিত। তাকে নানান খাবার এনে দিত। বিদায়ের সময় সবাই মিলে কিছু নগদ অর্থ আর জামা কাপড় কিনে দিয়ে ভালবাসা জানিয়েছে রুমিকে।
রুমিকে নেয়ার জন্য তার মামা সফিকুল ইসলাম ও মামী এসেছিল। এসময় রমনা পাত্রখাতা রিয়াজুল জান্নাহ দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুল আজিজ আকন্দের উপস্থিতিতে রুমির মা কাজলী বেগমের সাথে পুলিশ মোবাইলে কথা বলেন। এরপর তার সম্মতিতে ৪ জুলাই রাত ৯টার দিকে রুমিকে মামার কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ ব্যাপারে উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ইমতিয়াজ কবির জানান, রুমির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের সূত্র ধরে তার চাচা ও মামাসহ স্বজনদের খবর দেয়া হয়। এরপর মোবাইলে তার মায়ের সম্মতিতে মামা সফিকুল ইসলামের কাছে রুমিকে হস্তান্তর করা হয়।
মতামত দিন