• ২০২৫ Jul ৩১, বৃহস্পতিবার, ১৪৩২ শ্রাবণ ১৬
  • সর্বশেষ আপডেট : ১০:০৭ অপরাহ্ন
English
পরিচালনাপর্ষদ
আমাদের সাথে থাকুন আপনি ও ... www.timebanglanews.com

'ইন্ডিয়া আউট' থেকে 'বিশ্বস্ত অংশীদার', ভারত-মালদ্বীপের সম্পর্কের সমীকরণ বদলেছেন ।

  • প্রকাশিত ০২:০৭ অপরাহ্ন বৃহস্পতিবার, Jul ৩১, ২০২৫
'ইন্ডিয়া আউট' থেকে 'বিশ্বস্ত অংশীদার', ভারত-মালদ্বীপের সম্পর্কের সমীকরণ বদলেছেন ।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজের আমন্ত্রণে মালে সফর করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদী
বিশেষ প্রতিনিধি

মালদ্বীপে মোদির সফর: কৌশল, সংযম ও ভূরাজনীতির এক নিখুঁত পাঠ।

দুই বছর আগেও যিনি ভারত বিরোধিতার মুখ ছিলেন, আজ তিনিই দিল্লির অতিথি


দুই বছর আগে মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মোহাম্মদ মুইজু জিতেছিলেন এক রীতিমতো ভারত-বিরোধী প্রচারণা চালিয়ে। তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, দেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় সেনা ও উপস্থিতি হ্রাস করা, এক কথায়—“ইন্ডিয়া আউট”। এই স্লোগান এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে ধরেই নিয়েছিলেন, ভারতের মালদ্বীপ নীতি বুঝি শেষ।

তবে যা ঘটল, তা ছিল ঠিক উল্টো। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই সপ্তাহে হলেন মালদ্বীপে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গ্রহণ করা প্রথম বিদেশি নেতা, আর তা সেই মুইজুর আমন্ত্রণেই।

দিল্লির ধৈর্যশীল ‘লং গেম’। 


ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল শান্ত, দৃঢ় এবং দৃশ্যত সংযত।

– কোনো কূটনৈতিক পাল্টা প্রতিক্রিয়া নয়,

– কোনো অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি নয়,

– বরং ছিল শৃঙ্খলাবদ্ধ কৌশল ও আত্মবিশ্বাসের এক দৃষ্টান্ত।

মুইজু জয়লাভ করার পর মোদি ছিলেন প্রথম বিশ্বনেতা যিনি তাঁকে অভিনন্দন জানান। দিল্লি তখন জানত, সাময়িক উত্তেজনা থাকলেও ভূগোল, ইতিহাস, ও বাস্তবতা শেষ পর্যন্ত ভারতের পক্ষেই কথা বলবে।


🇮🇳 কেন ভারত অপরিহার্য?


যখন সমস্যা হয়, মালদ্বীপ জানে কার দিকে তাকাতে হয়:

ঘূর্ণিঝড় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভারতই প্রথম আসে সাহায্যে।

মহামারিতে ভারত পাঠায় ওষুধ, টিকা ও চিকিৎসক।

সামুদ্রিক দস্যুতা বা নিরাপত্তা সংকটে ভারতীয় নৌবাহিনী প্রস্তুত থাকে।

খাদ্য ঘাটতিতে ভারতই পাঠায় চাল-ডাল-চিনি।

চীন বা অন্য কেউ হয়তো প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু ভারত পাশে থাকে, শর্তহীনভাবে এবং ধারাবাহিকভাবে।


কূটনৈতিক নম্রতা, অহমিকা নয়

ভারতের কৌশল ছিল বিপরীত—চীন বা আমেরিকার মতো কখনোই প্রতিবেশীকে "ক্লায়েন্ট স্টেট" হিসেবে ব্যবহার করে না।

কোনো চাপ প্রয়োগ নয়


কোনো হুমকি নয়

বরং একটি খোলা বন্ধুত্বের হাত


এই সংযমী কূটনৈতিক নীতির ফলেই মালদ্বীপও ধীরে ধীরে ভারতের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে বাধ্য হয়।

ফলাফল: ভারতের শর্তে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন

দিল্লির মনোযোগী কূটনীতি মালদ্বীপের সঙ্গে সম্পর্ককে নতুনভাবে গড়ে তুলেছে—

মালদ্বীপকে হেয় না করে,

ভারতকেও নত হতে না দিয়ে।

এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি বিদেশ সফরের গল্প নয়—এটি এক কৌশলগত সংযম, ভূরাজনৈতিক মেমোরি ও বন্ধুত্বের শক্তি দিয়ে তৈরি নতুন যুগের সূচনা।

মোদি: কেবল শক্তিশালী নেতা নয়, কৌশলী রাষ্ট্রনায়ক

প্রধানমন্ত্রী মোদিকে আমরা সাধারণত এক দৃঢ়চেতা, প্রতিক্রিয়াশীল নেতা হিসেবে দেখি। কিন্তু এই পর্বটি তাঁর "রাষ্ট্রনায়কসুলভ সংযম ও কৌশলগত দূরদৃষ্টি"র অনন্য উদাহরণ।

তিনি জানেন কখন বল প্রয়োগ করতে হয়, আর কখন শুধু সময় ও ভরসার উপর ভর দিয়ে এগোতে হয়। এই রাষ্ট্রভাষায় লেখা হয় ইতিহাস—নয় কেবল প্রতিক্রিয়ার রাজনীতি।

মালদ্বীপের এই সফর কেবল কূটনৈতিক সফলতা নয়—এটি একটি পাঠ, যে পাঠ শেখায়: শক্তি মানেই চিৎকার নয়, প্রভাব মানেই নিয়ন্ত্রণ নয়। কখনো কখনো নীরবতা ও ধারাবাহিকতা-ই সবচেয়ে উচ্চকণ্ঠ বার্তা হয়।

এই সফর ভারতীয় কূটনীতির জন্য একটি “case study” হয়ে থাকবে। দক্ষিণ এশিয়ায় শক্তি প্রদর্শনের পরিবর্তে সহনশীলতা ও কৌশলের পথেই যে সবচেয়ে স্থায়ী বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, তারই উদাহরণ এটি।

সর্বশেষ