• ২০২৫ ডিসেম্বর ২৪, বুধবার, ১৪৩২ পৌষ ৯
  • সর্বশেষ আপডেট : ১২:১২ পূর্বাহ্ন
English
পরিচালনাপর্ষদ
আমাদের সাথে থাকুন আপনি ও ... www.timebanglanews.com

কক্সবাজার জমি অধিগ্রহনের টাকা পেতে হয়রানির শিকার ক্ষতিগ্রস্থরা

  • প্রকাশিত ১২:১২ পূর্বাহ্ন বুধবার, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৫
কক্সবাজার জমি অধিগ্রহনের টাকা পেতে হয়রানির শিকার ক্ষতিগ্রস্থরা
File
মতিউল ইসলাম (মতি)

কক্সবাজার জমি অধিগ্রহনের টাকা পেতে হয়রানির শিকার ক্ষতিগ্রস্থরা


দুর্নীতির দায়ে সাবেক জেলা প্রশাসক কারাগারে গেলেও থেমে নেই অসাধু সিন্ডিকেট 


কক্সবাজার প্রতিনিধি:


কক্সবাজার জেলায় ভূমি অধিগ্রহণ এখন আর উন্নয়নের প্রতীক নয়; এটি সাধারণ মানুষের জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি নিপীড়ন ও দুর্ভোগের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি আইন ও নীতিমালাকে উপেক্ষা করে জেলা প্রশাসনের একটি প্রভাবশালী চক্র বছরের পর বছর ধরে অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা আটকে রেখে ঘুষ, দুর্নীতি ও হয়রানির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে—এমন গুরুতর অভিযোগ ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে উঠে এসেছে।

ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন আইন অনুযায়ী, জমি অধিগ্রহণের আগেই বা দ্রুততম সময়ের মধ্যে জমির প্রকৃত মালিকদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং পুনর্বাসন নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের বাধ্যতামূলক দায়িত্ব। কিন্তু কক্সবাজারে বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অধিগ্রহণের পর পাঁচ থেকে দশ বছর পেরিয়ে গেলেও শত শত পরিবার ক্ষতিপূরণের এক টাকাও পায়নি, যা সরাসরি আইন লঙ্ঘনের শামিল।

গত এক দশকে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেললাইন, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ ও সম্প্রসারণ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পর্যটন প্রকল্প এবং হোটেল-মোটেল ও বাণিজ্যিক স্থাপনার নামে হাজার হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোতে জমি চলে গেলেও প্রকৃত মালিকদের বড় একটি অংশ আজও ক্ষতিপূরণ বঞ্চিত থেকে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ক্ষতিপূরণের ফাইল জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় ঢুকলেই শুরু হয় অদৃশ্য দেয়ালে আটকে যাওয়ার প্রক্রিয়া। এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ঘুরে ঘুরে ফাইল থেমে যায়, নতুন কাগজপত্রের অজুহাত দেখানো হয়, পুনঃজরিপ ও যাচাইয়ের নামে বছরের পর বছর সময় ক্ষেপণ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে একই জমির মালিককে ইচ্ছাকৃতভাবে মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে রাখা হয়। নির্দিষ্ট অঙ্কের ঘুষ প্রদান না করলে ফাইল নড়বে না—এ বাস্তবতা এখন প্রকাশ্য গোপন তথ্য।

জমি অধিগ্রহণের পর বহু পরিবার তাদের বসতভিটা, দোকানপাট ও আয়ের প্রধান উৎস হারিয়েছে। ক্ষতিপূরণের টাকা না পেয়ে কেউ ঋণের বোঝায় জর্জরিত, কেউ দিনমজুরে পরিণত হয়েছেন, আবার কেউ পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অধিগ্রহণের মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও জীবনমান উন্নয়ন; অথচ বাস্তবে সেই মানুষগুলোকেই অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের একাধিক গণমাধ্যমে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো প্রতিকারমূলক উদ্যোগ চোখে পড়েনি। বরং অভিযোগ রয়েছে, সংবাদ প্রকাশের পর কিছু ভুক্তভোগীকে নীরব থাকতে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে।

অতীতেও কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনকে কারাভোগ করতে হয়েছিল। কিন্তু একজন কর্মকর্তার শাস্তির পরও পুরো ব্যবস্থার সংস্কার হয়নি। বরং একই পদ্ধতিতে দুর্নীতি আরও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা জেলা প্রশাসনের ওপর আস্থা হারিয়ে সরাসরি সরকারের সর্বোচ্চ মহল ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। তাদের একটাই দাবি—দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ করে প্রকৃত মালিকদের চিহ্নিত করে জরুরি ভিত্তিতে অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদান করা হোক। অন্যথায় কক্সবাজারে তথাকথিত উন্নয়ন মানুষের চোখের পানির ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে—এমন আশঙ্কাই এখন সর্বত্র।

সর্বশেষ