• ২০২৪ মে ১০, শুক্রবার, ১৪৩১ বৈশাখ ২৭
  • সর্বশেষ আপডেট : ০৮:০৫ অপরাহ্ন
English
পরিচালনাপর্ষদ
আমাদের সাথে থাকুন আপনি ও ... www.timebanglanews.com

৮ এপ্রিল ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলন

  • প্রকাশিত ০৯:০৫ অপরাহ্ন শুক্রবার, মে ১০, ২০২৪
৮ এপ্রিল ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলন
ফাইল ছবি
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

 আগামী ৮ এপ্রিল ভার্চুয়াল মাধ্যমে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব প্রদান করবেন। এই শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা তুলে ধরার নতুন দ্বার উন্মোচন ঘটবে। সেই সঙ্গে বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি হবে মনে করা হচ্ছে।

ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের আগে ৫ এপ্রিল ডি-৮ বিসনেস ফোরাম এবং প্রথম ডি-৮ ইয়ূথ সামিট (যুব শীর্ষ সম্মেলন) অনুষ্ঠিত হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ দুটি সম্মেলনও সফলভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

এসম সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নের অভাবনীয় সাফল্যগাঁথাসমূহ বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়াও এর মাধ্যমে শুধু ডি-৮ এ নয় বরং সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনির্মান, স্বার্থ সংরক্ষণ ও বিশ্ব পরিমন্ডলে স্বীয় কূটনৈতিক অবস্থানকে আরো সুসংহত করা সম্ভব হবে।

করোনা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে। ডি-৮ সদস্য রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে, বাংলাদেশ, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও তুরস্ক। ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করেছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালে ঢাকায় দ্বিতীয় ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনটি সফলভাবে আয়োজন করেছিল।

এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বক্তব্য প্রদান করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। এছাড়াও, অন্যান্য ডি-৮ রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণও ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিতব্য এই শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য প্রদান করবেন।

তিনি বলেন, এই সম্মেলনের স্বাগতিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আগামী দুই বছর ডি-৮ এর চেয়ারের দায়িত্ব পালন করবে। এবারের শীর্ষ সম্মেলনে বর্তমান ডি-৮ চেয়ার তুরস্ক, বাংলাদেশকে ডি-৮ চেয়ারের দায়িত্ব হস্তান্তর করবে। আপনারা সবাই জানেন যে, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে একইসঙ্গে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষ উদযাপিত হচ্ছে।

এ ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণে ঢাকায় দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনপূর্বক বাংলাদেশ এই সংস্থাটির পরবর্তী দুই বছরের সভাপতিত্ব লাভ করলে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা তুলে ধরার নতুন দ্বার উন্মোচন এবং বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে প্রতীয়মান হয়।

জানা যায়, দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলন এর প্রস্তুতিমূলক সভা হিসেবে আগামী ৭ এপ্রিল ভার্চুয়াল মাধ্যমে ১৯-তম ডি-৮ কাউন্সিল অব মিনিষ্টার্স এবং তার পূর্বে ৫ ও ৬ এপ্রিল ডি-৮ কমিশনের ৪৩তম অধিবেশনের সভাটি ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে। ১৯-তম ডি-৮ মিনিষ্টার্স অব কাউন্সিলের সভায় পররাষ্ট্র মন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব প্রদান করবেন।

এছাড়াও, দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে ৫ এপ্রিল ভার্চুয়াল মাধ্যমে ডি-৮ বিসনেস ফোরাম এবং প্রথম ডি-৮ ইয়ূথ সামিট (যুব শীর্ষ সম্মেলন) অনুষ্ঠিত হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সম্মেলন সফলভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

চতুর্থ শিল্প বিল্পবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং নতুন প্রযুক্তির সাথে খাপ খাইয়ে ডি-৮ অন্তর্ভুক্ত দেশসমূহের যুব সম্প্রদায় যাতে তাদের সুপ্ত সম্ভাবনাকে সর্বোচ্চভাবে বিকশিত করে নিজ নিজ দেশের উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে অংশগহণ করতে পারে সে প্রত্যাশাকে সামনে রেখে সম্মেলনটির আয়োজক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এবারের শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘পার্টনারশিপ ফর এ ট্রান্সফরমেটিভ ওয়ার্ল্ড: হারনেসিং দ্যা পাওয়া অব ইয়ুথ এন্ড টেকনোলজি’ নির্ধারণ করেছে।

আসন্ন দশম শীর্ষ সম্মেলনে বাণিজ্য, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা, শিল্প সহযোগিতা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, পরিবহন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ এবং পর্যটন- এই ছয়টি ক্ষেত্রে আন্তঃ ডি-৮ সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ আন্তর্জাতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিষয়ে সম্মিলিত নীতিগত অবস্থান গ্রহণ করা হবে। এবারের শীর্ষ সম্মেলনে ডি-৮ ডেসিনিয়াল রোডম্যাপ ২০২০-২০৩০ এবং ঢাকা ঘোষণা ২০২১ শীর্ষক ডকুমেন্টসমূহ গৃহীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এসব রোডম্যাপ ও ঢাকা ঘোষণা ২০২১ এর আওতাভূক্ত কার্যক্রম শীর্ষ সম্মেলন পরবর্তী বাংলাদেশের দুই বছরের সভাপতিত্বে বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে বলে মনে করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এবারের সম্মেলনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ তুরস্কের কাছ থেকে ডি-৮ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করবে। ডি-৮ চেম্বারের সভাপতি সভাপতি হিসেবে ডি-৮ দেশসমূহের ভেতরে ব্যবসা ও বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে বলেও আশা করা যায়।

দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষ্যে ডিএইটঢাকাডটকম নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে, যেখানে আগামী দুই বছর, অর্থাৎ বাংলাদেশের চেয়ার থাকাকালীন বিভিন্ন তথ্যাদি আপলোড করা হবে।

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, এবারের শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে ডি-৮ ভূক্ত দেশসমূহের যুব প্রতিনিধিগণের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ডি-৮ ইয়ুথ সামিট আয়োজন করতে যাচ্ছে। ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিতব্য এই যুব সম্মেলনে ডি-৮ ভূক্ত দেশসমূহের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীগণ বক্তৃতা প্রদান করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। ডি-৮ ভূক্ত দেশসমুহ থেকে প্রায় দেড়শ যুব প্রতিনিধি ইয়ুথ সামিটে যোগদান করবেন বলে আমরা আশাবাদী। এছাড়াও, যুব সম্মেলনটিতে এন্টারপ্রেনারশিপ ফর সাসটেইনেবল ট্রান্সফরমেশন বিষয়ে একটি বক্তব্য প্রদান করা হবে।

ড. একে আব্দুল মোমেন আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন এবং আগামী দুই বছর ডি-৮ এর চেয়ারের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নের অভাবনীয় সাফল্যগাঁথাসমূহ বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়াও এর মাধ্যমে শুধু ডি-৮ এ নয় বরং সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনির্মান, স্বার্থ সংরক্ষণ ও বিশ্ব পরিমন্ডলে স্বীয় কূটনৈতিক অবস্থানকে আরো সুসংহত করা সম্ভব হবে।

তিনি এই শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনে সকলের সহযোগিতা চেয়ে বলেন, আমরা আশা করছি আমাদের সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সফলভাবে দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনটি আয়োজন করতে সক্ষম হবে এবং এর মাধ্যমে বহুপাক্ষিক কূটনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান আরো সুদৃঢ় হবে।

ডি-৮ এর চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশের অর্জনসমূহ কী হতে পারে- এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গৃহীত ‘রূপকল্প-২০২১’ এর মাধ্যমে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ‘রূপকল্প-২০৪১’ এর মাধ্যমে একটি উন্নত দেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবেলায় গৃহীত বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ, বিশ্বশান্তি রক্ষায় অংশগ্রহণ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সফলতা, বলপূর্বক বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় প্রদান এবং কোভিড মহামারির পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সচল রাখা ও রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখায় বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে। কোভিড মহামারির মধ্যেও গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫.২৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। এছাড়াও, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে।

তিনি বলেন, দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন এবং আগামী দুই বছর ডি-৮ এর চেয়ারের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নের এসকল অভাবনীয় সাফল্যগাঁথাসমূহ বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি হবে। সেই সাথে ডি-৮ এর চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশ, অন্যান্য ডি-৮ ভুক্ত দেশসমূহের সহযোগিতায় ডি-৮ এর অব্যবহৃত সম্ভাবনাসমূহকে কাজে লাগিয়ে এ অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতাকে এক নতুন মাত্রায় উন্নীত করতেও সক্ষম হবে।

এছাড়াও, ডি-৮ চেম্বারের সভাপতি হিসেবে অন্যান্য ডি-৮ ভুক্ত দেশসমূহ থেকে বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণেও বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ডি-৮ যুব সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি, এ যুব সম্মেলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের সাথে ডি-৮ সদস্যভুক্ত অন্যান্য দেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে। আমরা প্রত্যাশা করছি এ সম্মেলনে অর্জিত অভিজ্ঞতা তরুণ বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা এবং উদ্যোগ গ্রহণে ভবিষ্যতে সহায়তা করবে ।

সর্বশেষ