বাংলাদেশের বন্দরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাভূক্ত রুশ জাহাজ ভিড়তে না দেয়ার ঘটনা দুই দেশের সম্পর্কের উপর কোন প্রভাব ফেলবে না বলে ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলি সাবরীন।এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমাদের বোঝাপড়াা এতটাই ভাল যে আমরা মনে করি না জাহাজের বিষয় নিয়ে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে কোন বিরূপ প্রভাব পড়বে।”গত ২১শে ফেব্রুয়ারি মস্কোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে তলব করে রুশ সরকার। সেখানে রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ৬৯টি জাহাজ কেন ভিড়তে দেয়া হলো না সে বিষয়ে দেশটি উদ্বেগ জানিয়েছে বলেও স্বীকার করেন মিজ সাবরীন।
মঙ্গলবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদ সংস্থা তাস এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশের জন্য পণ্য বহনকারী রুশ জাহাজকে বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়তে না দেয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে মস্কো ঢাকার কুটনীতিক প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয় যে, বাংলাদেশ জাহাজ ভিড়তে না নেয়ার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা দুই দেশের মধ্যে থাকা ঐতিহ্যবাহী বন্ধুপূর্ণ সম্পর্কের বিরোধী এবং এটি দুদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্ভাবনার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এমন সংবাদের পর আজ (বৃুহস্পতিবার) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঐ সংবাদ সম্মেলন ডাকে। সেখানে রুশ জাহাজ ভিড়তে না দেয়ার সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি মুখপাত্র সেহেলি সাবরিন দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক ঘনিষ্ঠতার কথা তুলে ধরেন।
"রাশিয়া বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা তৈরিতে রাশিয়ার একটা বিশেষ ভূমিকা আছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জাতিসংঘে যুদ্ধের বিপক্ষে গৃহীত প্রস্তাবে রাশিয়ার অবস্থান বাংলাদেশের পক্ষে ছিল। আর তাই বাংলাদেশ মনে করে না যে, জাহাজ ভিড়তে না দেয়ার মতো একটি বিষয় দুই দেশের সম্পর্ককে খারাপ করবে।"
সেহেলি সাবরীন বলেন, মস্কোতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে তাকে কী বলা হয়েছে এবং তিনি সেখানে কী বলেছেন তা নিয়ে রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান ঢাকায় একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন যেটি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বিশ্লেষণ করছে।
গত নভেম্বরে রাশিয়া থেকে বাংলাদেশের রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সরঞ্জাম নিয়ে উরসা মেজর নামে একটি জাহাজ রওয়ানা হওয়ার পর ডিসেম্বরে বঙ্গোপসাগরে পৌঁছায়। কিন্তু জাহাজটিকে তাদের বন্দেরে ভিড়তে দেয়নি বাংলাদেশ।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের জেরে যুক্তরাষ্ট্র যে ৬৯টি রুশ জাহাজের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল উসরা মেজর জাহাজটি সেগুলোর একটি।
অবশ্য বাংলাদেশে ভিড়তে না পারলেও জাহাজটি পরে ভারতের হলদিয়া বন্দরে মালামাল খালাস করে।
ভারত মানছে না, তাহলে বাংলাদেশ কেন?
ভারত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা না মানলেও বাংলাদেশ কেন মানছে এমন প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ বাণিজ্য নির্ভর দেশ উল্লেখ করে মিজ সাবরীন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্যে ৮০% রপ্তানী হয়, এবং এজন্য সব দেশের সাথেই সুসম্পর্ক বজায় রেখে "জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিতে কাজ করছে বাংলাদেশ।"
তবে শুধু বাংলাদেশ নয় আরো অনেক দেশই মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা রুশ জাহাজে ভিড়তে দিচ্ছে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ঐ মুখপাত্র বলেন, নিষেধাজ্ঞাভুক্ত ৬৯টি জাহাজ ছাড়াও রাশিয়ার আরো প্রায় ১১৫৫টি জাহাজ রয়েছে।
তিনি জানান, উসরা মেজর জাহাজটি বাংলাদেশে ভিড়তে না পারার পরও আরো দুটি রাশিয়ার জাহাজ বাংলাদেশে এসেছে এবং বন্দরে ভিড়েছে। এগুলো নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকা জাহাজ।
এসব জাহাজে করে বাংলাদেশে রুপপুর পারমানবিক কেন্দ্রের জন্য সরঞ্জাম বহন করে আনা হয়েছে এবং এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
এদিকে জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা সর্বশেষ প্রস্তাবের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান কী হতে পারে এমন প্রশ্নে জবাবে মিজ সাবরীন বলেন, ঢাকা সব সময়ই জাতিসংঘের মূল নীতিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়।
তিনি বলেন, কেবলমাত্র আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের ব্যত্যয় না ঘটলে অন্য কোন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রস্তাব আসলে তাতে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে বাংলাদেশ।
তবে ইউক্রেনের আনা সর্বশেষ প্রস্তাব নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তিনি পরিষ্কার করেননি। "বাংলাদেশ জাতীয় স্বার্থ মাথায় রেখেই পদক্ষেপ নেবে।"
মতামত দিন