• ২০২৫ এপ্রিল ১৯, শনিবার, ১৪৩২ বৈশাখ ৬
  • সর্বশেষ আপডেট : ০২:০৪ পূর্বাহ্ন
English
পরিচালনাপর্ষদ
আমাদের সাথে থাকুন আপনি ও ... www.timebanglanews.com

কন্ঠের যত্নে সচেতন হই’ডা: মো: আব্দুল হাফিজ শাফী

  • প্রকাশিত ০৬:০৪ পূর্বাহ্ন শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫
কন্ঠের যত্নে সচেতন হই’ডা: মো: আব্দুল হাফিজ শাফী
time bangla
সিলেট অফিস :

আজ ১৬ এপ্রিল বিশ্ব কণ্ঠ দিবস কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে আমাদের ভাবনা ও অনুভূতি অন্যের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষমতা মানুষ হিসেবে আমাদের সব থেকে বড় প্রাপ্তি । এটা আমাদের কাছে মহান সৃষ্টিকর্তার এক অনন্য উপহার । আমরা কণ্ঠস্বর সম্পর্কে ততটা সচেতন নই। তাই এ দিবসের উদ্দেশ্য হচ্ছে, কণ্ঠ ও কণ্ঠনালির সমস্যা এবং সেই সঙ্গে কীভাবে কণ্ঠকে সুস্থ রাখা যায় তা জনগণকে জানানো।

সারাবিশ্বে ২০০২ সাল থেকে বিশ্ব কণ্ঠ দিবস পালিত হচ্ছে। তবে দেশে এ দিবস পালিত হচ্ছে ২০০৮ সাল থেকে। এবার ২০২৫ সালের বিশ্ব কণ্ঠ দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘Empower Your Voice’, যার বাংলা অনুবাদ দাঁড়ায়-‘আপনার কণ্ঠকে শক্তিশালী করুন’। যার জন্য প্রয়োজন কন্ঠের যত্ন। আমেরিকান একাডেমি অফ অটোলারিঙ্গোলজি-হেড অ্যান্ড নেক সার্জারির (AAO-HNS) প্রস্তাবিত এ প্রতিপাদ্যটি আমাদের কণ্ঠস্বরের যথাযথ ও গুণগত যত্ন নেওয়ার কথা বলে, যাতে আমরা নিজেদের সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারি এবং আমাদের যোগাযোগ দক্ষতা উন্নত হয়।

শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের মতো কণ্ঠস্বরেরও যত্ন প্রয়োজন। এ জন্য দরকার কণ্ঠের পরিমিত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার। জেনে নিন কণ্ঠস্বরের যত্নে সাত করণীয়—

১. অযথা চিৎকার-চেঁচামেচি থেকে বিরত থাকতে হবে। উচ্চস্বরে বা অনেক জোরে কথা বললে ভোকাল কর্ডে মাইক্রোহেমারেজ হয়, হেমাটোমা, ফ্রাইব্রোসিস হয়ে অনেক সময় কণ্ঠ পরিবর্তন হয়ে যায়। অনেক সময় শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতারা, মায়েরা শিশুসন্তানের সঙ্গে চিৎকার করে কথা বলেন, আবার ফেরিওয়ালা, হকারসহ বিভিন্ন কণ্ঠনির্ভরশীল পেশাজীবীরা জোরে কথা বলেন। কণ্ঠের যত্নে জনবহুল জায়গায় বা শোরগোলের স্থানে মাইক বা সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা উচিত।

২.অ্যালার্জি থেকেও অনেক সময় গলা বসার সমস্যা দেখা যায়। অনেক সময় কাশির কারণে ভোকাল কর্ড ফুলে যায়। এ ছাড়া পোস্টনাজাল ড্রিপ থেকেও গলা খুসখুস করতে পারে। তাই যাঁদের অ্যালার্জি আছে, তাঁরা অ্যালার্জি তৈরি করে এমন বস্তু বা উপাদান যথাসম্ভব পরিহার করুন।

৩. ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। ধূমপান গলার যেকোনো সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। কণ্ঠনালির ক্ষতি করে। ধূমপানের ফলে ভোকাল কর্ডে ক্যানসার, পলিপ হতে পারে।

৪. অত্যাধিক ঠান্ডা পানি পরিহার করুন। অনেক সময় প্রচণ্ড গরমের মধ্যে বাইরে থেকে এসেই হুট করে আমরা ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পান করি, যা আমাদের গলার জন্য ক্ষতিকর। যাঁদের ঠান্ডা অ্যালার্জিজনিত সমস্যা আছে, তাঁদের বিশেষ সতর্কতা মেনে চলা উচিত। ঘামের কারণেও ঠান্ডা লেগে যেতে পারে, গলা ভেঙে যায়। ঠান্ডা লেগে যদি গলা বসে যায়, তবে সাময়িক কথা বলা বন্ধ করতে হবে বা কমিয়ে দিতে হবে। কণ্ঠনালিকে বিশ্রাম দিতে হবে, এমনকি ফিসফিস করেও কথা বলা যাবে না। গলা ভাঙা উপশমে গরম বাষ্প বা স্টিম ইনহেলেশন ভালো। ফুটন্ত পানির বাষ্প যদি দৈনিক অন্তত ১০ মিনিট মুখ ও গলা দিয়ে টানা হয়, তবে উপকার হবে। মেনথল ইনহেলেশনও কণ্ঠনালিকে কিছুটা আর্দ্রতা দিয়ে থাকে।

৫. পানিশূন্যতা গলা ভাঙার আরেকটি বড় কারণ। অনেকে সারাদিন কথা বলছেন কিন্তু যথেষ্ট পানি পান করছেন না, এ কারণে কণ্ঠের ক্ষতি হয়। প্রতিদিন অন্তত দুই লিটার পানি পান করতে হবে।

৬. আমরা অনেক দেরি করে রাতে খাই এবং খেয়েই শুয়ে পড়ি। এটিও কিন্তু কণ্ঠনালির জন্য ভালো না। হাইপার অ্যাসিডিটির (ল্যারিঙ্গো ফ্যারিঞ্জাল রিফ্লাক্স ডিজিজ) কারণে গলার আশপাশে প্রদাহ হয়, কণ্ঠনালি ফুলে যায়। রাতের খাবার খাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা পরে শুতে যাওয়া উচিত। ঘুমানোর সময় মাথা যেন শরীরের তুলনায় একটু ওপরের দিকে থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলবেন।

৭. কণ্ঠনালিরও বিশ্রাম দরকার। আমরা অনেক সময় বিরতি ছাড়া কথা বলে যাই। মনে রাখবেন স্বরযন্ত্রও একটি যন্ত্র, কণ্ঠেরও রেওয়াজ বা ব্যায়াম দরকার।যাঁদের সর্বদা কণ্ঠ ব্যবহার করতে হয়, যেমন : শিক্ষকগণ, সংগীতশিল্পী, রাজনীতিবিদ কারো এমন সমস্যা দেখা দিলে —তাঁরা কিছুদিন কণ্ঠের বিশ্রাম নেবেন।

এছাড়া ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রের ক্যান্সারে ভোকাল কর্ড বা এর স্নায়ু আক্রান্ত হয়ে গলা বসে যেতে পারে। থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যায়ও অনেক সময় গলার স্বর বসে যায়। এ ছাড়া গলার কোনো অস্ত্রোপচারে ভোকাল কর্ড বা স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলেও গলা বসে যেতে পারে। তাই গলা ভাঙা বা গলা বসার উপসর্গকে অবহেলা করবেন না। দীর্ঘস্থায়ী স্বরভঙ্গের যে কারণটি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো কণ্ঠনালির ক্যানসার। কারও যদি স্বরভঙ্গ তিন সপ্তাহের বেশি থাকে, তাহলে অবশ্যই নাক কান গলা রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন।



লেখক: ডা: মো: আব্দুল হাফিজ শাফী,

এফসিপিএস (ইএনটি) ;

নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন,

আবাসিক সার্জন (ই.এন.টি),

সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট।

সর্বশেষ