নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
রাজনীতিতে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বার বার দলবদলের অভ্যাস ছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবসময় তিনি দলবদল করতে পছন্দ করতেন, একটু সরকার ঘেঁষাই ছিলেন বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
আজ বৃহস্পতিবার(১ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে সিলেট-৩ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর শোক প্রস্তাবের দেওয়া বক্তব্যের সময় সদ্যপ্রয়াত বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদকে স্মরণ করে এ মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরেকজন ভদ্র লোকের কথা বলতেই হয়, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। যদিও কখনো তিনি ছাত্রলীগ করেননি। তিনি সবসময় একটু সরকার ঘেঁষাই ছিলেন। তিনি কবি জসীমউদ্দীনের মেয়ের জামাই ছিলেন বলে তার প্রতি সহানুভূতি ছিল। কিন্তু তার কিছু কিছু কাজ একটু ভিন্ন ধরনের ছিল। যার কারণে তাকে একবার গ্রেফতারও করা হয়। কারণ বাংলাদেশের কিছু গোপন তথ্য সে সময় তিনি পাচার করেছিলেন। কবি জসীমউদ্দীন সাহেব নিজে এসেছিলেন আমাদের বাসায়, বঙ্গবন্ধুর কাছে অনুরোধ করলেন, তখন তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুকে যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার করা হয় তখন তিনি আইনজীবী ছিলেন, আসলে এখানে লেখা আছে কিন্তু তিনি অ্যাপয়েন্টেড আইনজীবী ছিলেন না। তিনি ড. কামাল হোসেন সাহেবের সঙ্গেই ঘুরতেন, বঙ্গবন্ধুর যে পিএস ছিলেন মোহাম্মদ হানিফ তাদের সঙ্গেই ঘুরতেন। তাদের সঙ্গেই তিনি সবসময় ছিলেন, বিশেষ করে ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল। সেই দুই জন সবসময় একসঙ্গেই চলতেন। আমার এখনো মনে আছে যখন আইয়ুব খান গোলটেবিল বৈঠক ডাকলো এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে আগরতলা মামলায় বন্দী অবস্থায় প্যারোলে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব হলো। তখন আমার মা এ বিষয়ে কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, মামলা প্রত্যাহার করে মুক্ত মানুষ হিসেবে যেন তিনি যান। তিনি প্যারোলে যাবেন না—এই তথ্যটি আমি মায়ের কাছ থেকে নিয়ে আমার বাবাকে পৌঁছে দিয়েছিলাম যেখানে বন্দী করে রাখা হয়েছিল সেই ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে। সেখানে আমাদের অনেক নেতা তখন উপস্থিত ছিলেন। তাজউদ্দিন আহমেদ, তোফাজ্জেল হোসেন মানিক মিয়া, আমিরুল ইসলাম, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদসহ আরও নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন এবং সেটাই তারা বলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আমি যখন আমার মায়ের বার্তাটা পৌঁছে দেই। অবশ্য বঙ্গবন্ধু নিজেও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাকে মুক্ত মানুষ না করলে তিনি যাবেন না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মায়ের বার্তাটা পৌঁছে বাসায় ফিরে আসার পর দোতলার বারান্দায় একা একা দাঁড়িয়ে আছি। আমিরুল ইসলাম ও মওদুদ আমার কাছে আসেন। আমার কাছে এসে বলেছিলেন, আমিরুল ইসলাম সাহেবই বলেছিলেন আর মওদুদ তাকে সায় দিয়েছিলেন যে, ‘তুমি কেমন মেয়ে তুমি চাও না তোমার বাবা কারাগার থেকে ফিরে আসুক’। জবাবে আমি বলেছিলাম—হ্যাঁ আমার বাবা সম্মান নিয়েই ফিরে আসবেন। আপনারা এ সমস্ত বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। সবসময় এ ধরনের কিছু কিছু কাজ তার (মওদুদ) ছিল। কিন্তু তিনি মুখে যাই বলুক আবার তার লেখাগুলির মধ্যে অনেক সময় অনেক কন্ট্রোভার্সিয়াল কথা নিজের আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে তিনি লিখেছেন।
মওদুদ আহমদের বিভিন্ন দল পরিবর্তনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবসময় তিনি দলবদল করতে পছন্দ করতেন। যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ সেই ’৬৯ সালে আমাদের সঙ্গে মিশে গেলেন। ’৭৫ এর পরে বিএনপিতে যোগ দিলেন। তিনি সাজাপ্রাপ্ত একজন আসামি ছিলেন। জেনারেল এরশাদ সাহেব তাকে ক্ষমা করে দিয়ে মন্ত্রিপরিষদে আইনমন্ত্রী করলো। আবার তিনি বিএনপিতে যোগদান করলেন। রাজনীতিতে বার বার দলবদল তার অভ্যাস ছিল, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তারপরও বলবো, তিনি একটা ট্যালেন্টেড মানুষ ছিলেন কিন্তু তার দেশপ্রেম হয়তো কাজে লাগালে দেশকে অনেক কিছু দিতে পারতেন, এটা হচ্ছে বাস্তবতা। তিনি মারা যাওয়ার পর আমি নিজে হাসনাকে (মওদুদ আহমদের স্ত্রী), তার সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল। তার সঙ্গে কথা বলি। আমার শোক বার্তাও জানিয়েছি।
মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সংসদ সদস্যকে হারিয়েছি এটাই সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক। মাহমুদ উস সামাদ ভালো সংগঠক ছিলেন। তিনি শিশুদের সচেতনতা ও বঙ্গবন্ধুর আর্দশে অনুপ্রাণিত করার কাজ করে গেছেন। যখনই শুনলাম তিনি করোনায় আক্রান্ত, ব্যবস্থা নিতে না নিতেই তিনি চলে গেলেন। অত্যন্ত রাজনৈতিক সচেতন মানুষ ছিলেন। তার মৃত্যুতে সিলেটের রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলো।
প্রধানমন্ত্রী তার রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচ টি ইমামকে স্মরণ করে বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার যখন থেকে গঠিত হয় তখন থেকেই তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একজন আমলা হলেও রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন।
মতামত দিন