• ২০২৪ মে ০৯, বৃহস্পতিবার, ১৪৩১ বৈশাখ ২৬
  • সর্বশেষ আপডেট : ১২:০৫ অপরাহ্ন
English
পরিচালনাপর্ষদ
আমাদের সাথে থাকুন আপনি ও ... www.timebanglanews.com

২০ মাসেও চালু হয়নি কুড়িগ্রামের শতবর্ষি রমনা লোকাল ট্রেন

  • প্রকাশিত ০২:০৫ অপরাহ্ন বৃহস্পতিবার, মে ০৯, ২০২৪
২০ মাসেও চালু হয়নি কুড়িগ্রামের শতবর্ষি রমনা লোকাল ট্রেন
পার্বতীপুর-রমনা বাজার রুটে বন্ধ হওয়া রমনা লোকাল ট্রেন
মোঃ আব্দুল কাদের, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

১০.১১.২০২১

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বন্ধ হওয়া পার্বতীপুর-রমনা বাজার রুটে নিয়মিত চলাচলকৃত শতবর্ষি রমনা লোকাল ট্রেনটি বিশ মাস অতিবাহিত হলেও আর চালু হয়নি। ফলে এই অঞ্চলের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির যাত্রীরা স্বল্প ভাড়ায়, সহজে ও নিরাপদে চিলমারী, রংপুর ও পার্বতীপুর হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রেলওয়ে স্টেশন ঘিরে খেটে খাওয়া কুলি-মজুর, রিক্সা-ভ্যান চালক ও চা-পান বিক্রেতাগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে খেয়ে-না খেয়ে পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

রাজারহাটের সুপাড়ি ব্যবসায়ী মাহাবুব হোসেন, সিংগারডাবরির রাজা, জলিল,  ‌সৈয়দ আলী , মিন্টু, সদরের  শামসুজ্জামান সুজা, দুর্গাপুরের মনছের আলি, উলিপুরের ফুলমিঞা , মুকুল , মোজাম্মেল , মজিবর ও বাচ্চু মিয়া বলেন, আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা কম খরচে রমনা লোকাল ট্রেনে তিস্তা, রংপুর, বদরগঞ্জ, পার্বতীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কাঁচা ও মজা সুপাড়ি বুক করে পাঠিয়ে লাভবান হতাম। ট্রেনটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় সড়ক পথে বেশী ভাড়া দিয়ে এসব মালামাল পাঠাতে গিয়ে আমরা লাভের মুখ দেখতে পারছি না। বরং লোকসান হচ্ছে।

এছাড়া পাঁচপীর বাজারের চাটাই  ‌ব্যাবসায়ী হজরত আলী , হাছেন আলি , আইয়ুব আলি , মহুবর ও উমর আলী একই কষ্টের কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা প্রতি হাটে রমনা লোকাল ট্রেনে ৫০০/৬০০ মন করে চাটাই বুকিং করতাম কিন্তু এখন চরম ভোগান্তিতে আছি। পাঁচপীর রেলওয়ে স্টেশনের তৎকালীন বুকিং সহকারী মোঃ আল আমিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি চাটাই বুকিং এর সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, চাটাই-সুপাড়ি ছাড়াও প্রতিদিন এই ট্রেনটাতে করে কলাসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি পার্বতীপুর- বদরগঞ্জ হতে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন ষ্টেশনে আসতো এবং ট্রেনটি ফেরার সময় অনেক ধরনের মালামাল নিয়ে যেত । সংশ্লিষ্ট ব্যবসার সাথে জড়িত সকল ব্যবসায়ীগণ অবিলম্বে ট্রেনটি চালুর জোড় দাবী করেন।

জানা যায়, গত বছরের ২৪ মার্চ দুপুরে রমনা লোকাল ট্রেনটি কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার রমনা বাজার স্টেশন থেকে পার্বতীপুর স্টেশনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার পর অদ্যবধি আর ফিরে আসেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯২৮ সালের আগস্ট মাসে চিলমারী থেকে প্রথম রেল যোগাযোগ চালু হয়। তিস্তা হতে রমনা পর্যন্ত ৫৭ কি.মি. রেলপথের ৪৩ কি.মি. রেলপথ পড়ে কুড়িগ্রামের ভিতরে। যাত্রীদের সুবিধার্থে কুড়িগ্রামের ৪৩ কি.মি. রেলপথের মধ্যে ৮টি রেলস্টেশন স্থাপন করা হয়। ব্রহ্মপুত্রের ব্যাপক ভাঙ্গনে চিলমারী রেলস্টেশন নদে বিলীন হওয়ার পর পার্বতীপুর-রমনা বাজার রুটে ২টি এবং লালমনিরহাট-রমনা বাজার রুটে ২টিসহ মোট ৪টি ট্রেন নিয়মিত চলাচল করে। কিন্তু ২০০২ সালের দিকে আকস্মিকভাবে পার্বতীপুর-রমনা বাজার রুটে ১টি এবং লালমনিরহাট-রমনা বাজার রুটে ২টিসহ মোট ৩টি ট্রেন বন্ধ করে দেয়া হয়। পাশাপাশি কুড়িগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত পুরাতন রেলওয়ে স্টেশনও তুলে নেয়া হয়। তারপর থেকে একমাত্র রমনা লোকাল ট্রেনটি পার্বতীপুর-রমনা বাজার, রমনা বাজার-তিস্তা, তিস্তা-রমনা বাজার ও রমনা বাজার-পার্বতীপুর রুটে নিয়মিত চলাচল করলেও করোনার কারণে বন্ধ হওয়ার পর ২০ মাসেও আর চালু হয় নাই।

রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি, কুড়িগ্রাম জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক এবং আন্তঃনগর ট্রেন আন্দোলনের অন্যতম নেতা শামসুজ্জামান সরকার সুজা বলেন, রমনা লোকাল ট্রেনটি কুড়িগ্রামের নিম্নআয়ের মানুষের যাতায়াতের প্রাণ। আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ রমনা লোকাল চালুসহ দ্বিতীয় ধাপে তিস্তার পরিবর্তে রংপুর গিয়ে ফিরে আসার দাবীতে আন্দোলন করে আসছি এবং ডিআরএম, জিআইবিআরসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদনও করেছি। তারপরও রমনা লোকাল চালু না করায় এটি চিরতরে বন্ধ করে দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের গভীর ষড়যন্ত্র বলে মনে করছি। তিনি অবিলম্বে রমনা লোকাল ট্রেন চালুসহ ২য় ধাপে রমনা-তিস্তা ও তিস্তা-রমনা'র পরিবর্তে রমনা-রংপুর এবং রংপুর-রমনা রুটে চলাচলের জোড় দাবী জানান। 

গণকমিটির সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও কলামিস্ট নাহিদ হাসান নলেজ বলেন, করোনাকালীন সময়েও দফায় দফায় সারাদেশে ২০ সেট লোকাল ট্রেন চললেও দারিদ্রপীড়িত কুড়িগ্রামে  রমনা লোকাল ট্রেনটি না চালানো আরেকটি ষড়যন্ত্র। তিনি রেল বিভাগের এই নীতির প্রতিবাদ জানান।

গত ১৯ আগস্ট থেকে করোনার কারণে বন্ধ থাকা দেশের প্রায় সকল ট্রেন চালু হলেও রমনা লোকাল ট্রেনটি চালু না হওয়ায় অবিলম্বে রমনা লোকাল ট্রেন চালুর দাবীতে কুড়িগ্রাম জেলাবাসী, রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি, টিম কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, রমনা লোকাল ট্রেন বাস্তবায়ন কমিটি ও মাদকমুক্ত সমাজের ব্যানারসহ কুড়িগ্রামের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রায় সহস্রাধিক   মানুষ রংপুর এক্সপ্রেসের কানেক্টিং শাটল ট্রেন অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করেন।
বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার, লালমনিরহাট জনাব শাহ সূফী নূর মোহাম্মদ জানান, দীর্ঘদিন থেকে রমনা লোকাল ট্রেনটি বন্ধ থাকলেও চালুর এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমরা রমনা লোকাল চালানোর চেষ্টায় আছি। 

সর্বশেষ