করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ঈদের পর ২৩শে জুলাই থেকে যে কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হচ্ছে সেখানে কয়েকটি ব্যবসায়িক সেক্টর আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।
আজ সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক আদেশে এই কথা জানানো হয় ।সরকার থেকে বলা হচ্ছে, কোরবানির পশুর চামড়া পরিবহন, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কঠোর লকডাউনের আওতার বাইরে থাকবে। খাদ্য ও খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াজাতকরণ মিল কারখানা এবং ওষুধ,অক্সিজেন ও কোভিড--১৯ প্রতিরোধ ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদনকারী শিল্প এই বিধিনিষেধের আওতার বাইরে থাকবে।
বিধিনিষেধের যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সেটি আরও দু-এক দিন পরে শুরু করা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা থাকলেও এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। অর্থাৎ পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে আগামী ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত আবারও কঠোর বিধিনিষেধ থাকবে।
ওই ১৪ দিন সব ধরনের শিল্পকারখানাও বন্ধ থাকবে। তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের পক্ষ থেকে শিল্প কলকারখানা খোলা রাখার দাবি থাকলেও এ বিষয়টি এখন পর্যন্ত সরকার আমলে নেয়নি। এর আগের বিধিনিষেধের সময় শিল্পকারখানা খোলা ছিল। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলছে, পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপন, জনসাধারণের যাতায়াত, ঈদের আগে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে ২৩ জুলাই সকাল ছয়টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা হলেও ঈদের পর ১৪ দিন খুবই কঠোর বিধিনিষেধ থাকবে। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে সরকার এ বছরের ৫ এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ দিয়ে আসছে। এর পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনও বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ বিধিনিষেধ জারি করেছিল।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ঈদের পরের ১৪ দিন (২৩ জুলাই-৫ আগস্ট) আগের বিধিনিষেধের মতো সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন, অভ্যন্তরীণ উড়োজাহাজসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তখন সরকারি কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন এবং দাপ্তরিক কাজগুলো ভার্চ্যুয়ালি সম্পন্ন করবেন। এ ছাড়া শপিং মল, মার্কেটসহ সব দোকানপাট, সব ধরনের শিল্পকারখানা, সব পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
তবে আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবা যেমন, কৃষিপণ্য-উপকরণ, খাদ্যশস্য-খাদ্যদ্রব্য পরিবহন বা বিক্রি, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, করোনার টিকাদান, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন, ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তাব্যবস্থা, ডাকসেবা, ব্যাংক, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ অন্যান্য জরুরি বা অত্যাবশ্যকীয় পণ্য-সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে। কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে। খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি (অনলাইনে কেনা বা খাবার নিয়ে যাওয়া) করতে পারবে।
আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাঁদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট বা প্রমাণ দেখিয়ে গাড়িতে যাতায়াত করতে পারবেন। আর ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সেবা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় খোলার বিষয়ে অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতসমূহের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবেন। আগের বিধিনিষেধের মতো ২৩ জুলাই থেকে টহলে থাকবেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
মতামত দিন