মোঃ আব্দুল কাদের, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
০৬.০৫.২০২১
কুড়িগ্রামে পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে চলমান লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়া দুই শতাধিক নারী-পুরুষের মাঝে মরহুম এ্যাড. আব্দুল জলিল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) সদর উপজেলার বেলগাছা ও নতুন রেলওয়ে স্টেশনের পার্শ্ববর্তী এলাকার ২ শতাধিক শ্রমজীবি অসহায় মানুষের মাঝে মরহুম এ্যাড. আব্দুল জলিল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মরহুমের স্ত্রী রওশন আরা সরকার, জৈষ্ঠ্য পুত্র রাশেদুজ্জামান বাবু, কণ্যা জাকিয়া সুলতানা সুইটি ও ছোট ছেলে রকিবুজ্জামান বনি এই নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন(অবঃ) ডাঃ আমিনুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নুর বখ্ত, কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ মিলন, সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক আব্দুল খালেক ফারুক, মরহুমের জামাতা, পুত্রবধু প্রমুখ।
মরহুম আব্দুল জলিল ১৯৪৩ সালে তৎকালীন কুড়িগ্রাম মহকুমার উলিপুর থানার তবকপুর ইউনিয়নের বামনাছড়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের পঞ্চাইত বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আহসান উদ্দিন সরকার ও মাতার নাম পিঞ্জিরন বেওয়া। মাত্র এক বছর বয়সে তিনি তাঁর পিতাকে হারান এবং মায়ের সান্নিধ্যেই বেড়ে উঠতে থাকেন। শিশু বেলা থেকেই তিনি প্রখর মেধাবী ছিলেন। তাই কৃতিত্বের সাথে মেট্রিকুলেশন পাশ করার পর বজরা এলকে আমিন উচ্চ বিদ্যালয়ের বিএসসি শিক্ষক বড় ভাই আব্দুল জব্বারের সহায়তায় রংপুর কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথে বিএ ও বিএড পাশ করে উলিপুর গুনাইগাছ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরবর্তীতে স্বাধীনতার পূর্বে সরকারি চাকুরীতে যোগদান করেন। কিন্তু সরকারি চাকুরী তাঁর মোটেও ভাল লাগতো না। সেজন্য সরকারি চাকুরীরত অবস্থায় তিনি এলএলবি নৈশ কোর্সে ভর্তি হয়ে দিনে চাকুরী করতেন আর রাতে এলএলবি পড়তেন। এভাবে এলএলবি পাশের পর নিজ এলাকায় স্বাধীন পেশার খোঁজে সরকারি চাকুরী ছেড়ে তিনি ১৯৭৪ সালে কুড়িগ্রামে ফিরে এসে আদালত পাড়ায় যাতায়াত করেন এবং ১৯৭৫ সালে তিনি আইনজীবি হিসেবে নিয়মিত প্রাকটিস শুরু করেন।
অল্পদিনেই দক্ষ ও চৌকস আইনজীবি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। কারিগরি শিক্ষার প্রসারে ২০০৪ সালে তিনি খলিলগঞ্জ কারিগরি ও বাণিজ্য মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
২০০৬ সালে তিনি আকস্মিক মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে কিছু দিনের মধ্যেই চিকিৎসার তেমন সুযোগ না দিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান।
মৃত্যুকালে তিনি তাঁর স্ত্রী, ৪ পুত্র সন্তান ও ৪কণ্যা সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
তাঁর বড় ছেলে রাশেদুজ্জামান বাবু খলিলগঞ্জ কারিগরি ও বাণিজ্য মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া তিনি একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে কুড়িগ্রামে ব্যাপকভাবে পরিচিত, ২য় ছেলে রোকনুজ্জামান বুলেট পূবালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার, ৩য় ছেলে রুবেলুজ্জামান বিদ্যুৎ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে মাওয়া ঘাটে কর্মরত আছেন এবং ছোট ছেলে রকিবুজ্জামান বনি একজন ব্যবসায়ী।
মরহুমের বড় মেয়ে রাজিয়া সুলতানা বিউটি ঢাকার বঙ্গবন্ধু বিদ্যানিকেতন স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক, ২য় মেয়ে নাজনীন সুলতানা বিলকিছ গৃহিনী, ৩য় মেয়ে জাকিয়া সুলতানা সুইটি একজন আইনজীবি ও ছোট মেয়ে জিনাত সুলতানা ইতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক।
ভবিষ্যতে মরহুম এ্যাড. আব্দুল জলিল ফাউন্ডেশনের প্রসার আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে বলে জানিয়েছেন সংস্থা সংশ্লিষ্টরা।
মতামত দিন